Views Bangladesh Logo

‘৪০ বছরেও এমফিলে ভর্তি থাকলেই ডাকসুতে প্রার্থী হওয়া যাবে’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন সামনে রেখে বয়স নিয়ে তৈরি হওয়া বিভ্রান্তির অবসান ঘটালেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাশিম উদ্দিন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন—যে কেউ যদি নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিল বা মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি থাকেন, তবে বয়স যতই হোক, তার ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।

বুধবার (২৫ জুন ) ভিউজ বাংলাদেশকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সংবিধানে কোনো বয়সসীমা নেই। একজন শিক্ষার্থী যদি ৪০ বছর বয়সেও নিয়মিত ছাত্র হিসেবে এমফিল বা মাস্টার্সে ভর্তি থাকেন, তবে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। সিদ্ধান্তটা ছাত্রসমাজের—তারা কাকে নেতৃত্বে দেখতে চায়।”

বয়স নিয়ে চলমান বিতর্কের জবাবে তিনি আরও বলেন, “ডাকসু নির্বাচনের মানে শুধুই বয়স দিয়ে মাপা নয়। নেতৃত্ব, শিক্ষার্থীদের আস্থা এবং নিয়মিত ছাত্রত্বই আসল বিষয়।”

এ বক্তব্যের পর স্পষ্ট হয়েছে যে ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ ছাত্রত্বের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে, বয়স দিয়ে নয়।

ডাকসু নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে দ্বিতীয়বারের মতো এমফিল ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। সাধারণত বছরে একবার এমফিল ভর্তি কার্যক্রম হয়, কিন্তু নির্বাচন সামনে রেখে আবারও এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে উঠেছে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ।

শিক্ষার্থীদের একটি অংশের দাবি, এটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কিছু বিশেষ গোষ্ঠীকে সুযোগ করে দেয়ার একটি কৌশল। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি করেছে, জানুয়ারিতে আবেদনকারীর সংখ্যা আশানুরূপ না হওয়ায় নতুন করে আবেদন আহ্বান করা হয়েছে।

তবে অনেকেই মনে করছেন, বয়সসীমা না থাকায় দীর্ঘমেয়াদি সাবেক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকালে ও বিকেলে দুই দফায় সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে পৃথক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকের মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল চূড়ান্ত করবে।

তিনি বলেন, “নির্বাচনের জন্য প্রশাসন বা অন্য কেউ নয়, একমাত্র নির্বাচন কমিশনই তফসিল ঘোষণা করতে পারে। আমরা চাই, সকল পক্ষের মতামত নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচন হোক।”

২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন পরবর্তী সময়ে অনেক শিক্ষার্থীর ফলাফল আটকে গেছে বা তারা একাডেমিক ব্যত্যয়ের শিকার হয়েছেন। তাদের প্রার্থী হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

এ বিষয়ে ড. জাশিম উদ্দিন বলেন, “যেসব শিক্ষার্থী প্রার্থিতার বিষয়ে দ্বিধায় আছেন, তাদের বিষয়টি আমরা ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে স্পষ্ট করবো এবং পরে প্রশাসনকে জানানো হবে।”

নির্বাচন প্রক্রিয়াকে এক সফরের সঙ্গে তুলনা করে অধ্যাপক জাশিম উদ্দিন বলেন, “ধরা যাক, একটি ট্রেন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাবে। মাঝপথে যেন থেমে না যায়, তার জন্য দরকার সমস্ত প্রস্তুতি। ডাকসুও তেমনই—এই নির্বাচন সফল করতে হলে এখন থেকেই আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে।”

ডাকসু নির্বাচন পরিচালনার জন্য গঠিত কমিশনে রয়েছেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ আরও ১০ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা। প্রতিটি হল প্রশাসন থেকে একজন করে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়েছেন, যাতে হলভিত্তিক তদারকি নিশ্চিত করা যায়।

মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে হল প্রভোস্টদের সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা, নিরাপত্তা এবং প্রশাসনিক সহযোগিতা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

রাজনীতিতে ছাত্রদের আগ্রহ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন এবং পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে তাদের অনীহা দেখে হতাশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক জাশিম উদ্দিন।

তিনি বলেন, “ঢাবির শিক্ষার্থীরা নির্বাচন নিয়ে যতটা সচেতন, পরিবেশ নিয়ে ততটাই উদাসীন। এটি খুবই দুঃখজনক। আমাদের চাওয়া, তারা সমাজ ও বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়নে সমানভাবে অংশ নিক।”

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ