দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চিকিৎসক-নার্সদের বেতন সর্বনিম্ন
বাংলাদেশে চিকিৎসক ও নার্সদের গড় বেতন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। প্রতিবেশী ভারত ও নেপালের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে এবং উন্নত দেশগুলোর তুলনায় প্রায় ৩০ গুণ কম। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এ বৈষম্য দেশের স্বাস্থ্য খাত উন্নয়নের বড় অন্তরায়।
মঙ্গলবার ঢাকার সিরডাপ অডিটরিয়ামে ’সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতননীতি: বর্তমান বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ তথ্য উঠে আসে। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস, বাংলাদেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ সভায় সভাপতিত্ব করেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও হেলথ সেক্টর রিফর্ম কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ আকরাম হোসেন।
ড. হোসেন জানান, বাংলাদেশে চিকিৎসকরা গড়ে বছরে মাত্র ৩ লাখ টাকা আয় করেন। তুলনামূলকভাবে ভারতের চিকিৎসকরা বছরে আয় করেন গড়ে ১৬ লাখ টাকা, যুক্তরাজ্যে ৯৮ লাখ টাকা এবং সিঙ্গাপুরে ১১ লাখ টাকা। নার্সদের ক্ষেত্রেও একই বৈষম্য রয়েছে। বাংলাদেশে নার্সরা বছরে প্রায় ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা আয় করেন, যেখানে ভারতে তা প্রায় ৬ লাখ টাকা এবং নেপালে আরও বেশি।
ড. হোসেন বলেন, এ ধরনের বেতন বৈষম্য শুধু পেশাগত প্রেরণাই কমিয়ে দিচ্ছে না, সরাসরি স্বাস্থ্যসেবার মানকেও প্রভাবিত করছো’। “এর ফলে অনেক দক্ষ চিকিৎসক বাধ্য হচ্ছেন বিদেশে সুযোগ খুঁজতে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, চিকিৎসক-নার্সদের বেতন বাড়ালে দক্ষ জনবল ধরে রাখা সম্ভব হবে, স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত হবে এবং চলমান ব্রেন ড্রেইন কমবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সরকার ইতোমধ্যে এ সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আলোচনায় বক্তারা স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য আলাদা বেতন কমিশন ও স্বাধীন বেতননীতি প্রণয়নের আহ্বান জানান। ন্যায়সংগত ও টেকসই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রতি তিন বছর অন্তর বেতন কাঠামো সংস্কারেরও সুপারিশ করা হয়।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ও হেলথ সেক্টর রিফর্ম কমিশনের প্রধান অধ্যাপক এ.কে. আজাদ খান বলেন, সঠিক মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা অর্থবহ স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন ’বর্তমান বেতন কাঠামো স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভিত্তিকে দুর্বল করছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের বেতনের বৈষম্য পেশাগত প্রেরণা এবং সার্বিক সেবার মান দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’
অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন বেতন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক, শ্রম স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, প্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. শাহিনা সোবহান মিতু, ডিএবি মহাসচিব ড. মো. জাহিরুল ইসলাম শাকিল এবং এনডিএফ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে