গুমের ঘটনাগুলো ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: কমিশন

পূর্ববর্তী সরকারের আমলে সংঘটিত গুমের ঘটনাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের ছদ্মবেশে ছিল বলে দাবি করেছে বলপূর্বক গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। এসব ঘটনায় দায়ীদের কয়েকজনকে চিহ্নিত করে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে কমিশন।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাজধানীর গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বলপূর্বক গুমকে ভিন্নমত দমন, রাজনৈতিক ক্ষমতা সুসংহতকরণ এবং আন্তর্জাতিক বৈধতা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল’।
৪ জুন প্রধান উপদেষ্টার কাছে দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয় কমিশন।
এ বিষয়ে বিচারপতি মইনুল বলেন, ‘এ পর্যন্ত এক হাজার ৮৫০টি অভিযোগ বিশ্লেষণ করে ২৫৩টি বলপূর্বক গুমের সমর্থনে প্রমাণ পেয়েছি। এগুলো কয়েকজন দুর্বৃত্ত কর্মকর্তার তৈরি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। বরং, ছিল নিয়মতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অভিযান, যা বিরোধীদের নীরব করতে চরমপন্থা মোকাবিলার অজুহাতে ব্যবহার করা হয়েছিল’।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের মধ্যে ছিলেন ছাত্র, রাজনৈতিককর্মী, সাংবাদিক, ডাক্তার, প্রকৌশলী এবং সরকারি-বেসরকারি পেশাজীবীরা। বিচার ব্যবস্থাকে কারসাজি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে রাজনীতিকরণ এবং নির্যাতন ও গোপন আটকের সংস্কৃতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছিল। কিছু নাগরিককে অবৈধভাবে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে।
কমিশনের মতে, ৮১ শতাংশ অভিযোগকারী জানিয়েছেন যে, পরে ফিরে আসা ব্যক্তিরা ভুক্তভোগী। আর ১৯ শতাংশের অভিযোগ, নিখোঁজ ব্যক্তিদের সাথে এমন কিছু ঘটনা জড়িত, যাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১২টি অমীমাংসিত নিখোঁজের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়েছে।
তদন্ত চলমান থাকায় আরও তথ্য গোপন রাখা হয়েছে বলেও জানান কমিশনের চেয়ারম্যান।
সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় মানবাধিকার ও আইনি প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখার গুরুত্বে জোর দেন বিচারপতি মইনুল। রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান ব্যবহারের বিষয়ে সতর্কও করেন তিনি।
‘২০১৬ সালের হোলি আর্টিজান হামলা সন্ত্রাসবাদের বাস্তবতা তুলে ধরে। কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘনের ন্যায্যতা প্রমাণে এই হুমকির ব্যবহার আইনের শাসন এবং জনসাধারণের আস্থা নষ্ট করে’- বলেন তিনি।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) জোরপূর্বক গুমের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি জড়িত সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে। চেয়ারম্যান আরও ইঙ্গিত দেন যে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি ভূমিকা পালন করেছে। তবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাইরের ব্যক্তিদের ওপর কমিশনের এখতিয়ার নেই।
কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন সংবাদ সম্মেলনে আরও স্পষ্ট করেন, ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) বলপূর্বক গুমে সরাসরি দায়ী নয়। তবে সম্ভবত অভিযান সম্পর্কে অবগত।
আরেক সদস্য মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, জোরপূর্বক গুমের সম্ভাব্য ঘটনাগুলো তদন্তে ভারত থেকে সেখানে বন্দি বাংলাদেশিদের সম্পর্কে তথ্যও চেয়েছেন তারা।
‘তথ্য হারিয়ে যাওয়া এবং বিলম্বিত তথ্যসহ নান চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও কমিশন তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যার লক্ষ্য, এই মামলাগুলোর জবাবদিহিতা আনা’।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে