সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে দিল্লির মন্তব্য প্রত্যাখান ঢাকার
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থা নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে প্রত্যাখান করেছে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে একথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থা নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের সাম্প্রতিক মন্তব্য প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তার মন্তব্যে সত্য প্রতিফলিত হয় না। বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে— এমন কোনও ভুল, অতিরঞ্জিত বা উদ্দেশ প্রণোদিত আখ্যানকে বাংলাদেশ সরকার স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি যে, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে হিন্দুদের ওপর পদ্ধতিগত নির্যাতন হিসাবে চিত্রিত করার এবং ভারতের বিভিন্ন অংশে বাংলাদেশবিরোধী মনোভাব প্রচারের জন্য বিদ্বেষপূর্ণভাবে ব্যবহার করার পদ্ধতিগত প্রচেষ্টা চলছে। আমরা কিছু মহলে একটি সুস্পষ্ট এবং অন্যায্য পক্ষপাতিত্ব লক্ষ্য করি, যেখানে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো প্রচার করা হয়, ভুলভাবে উপস্থাপনা করা হয় এবং বাংলাদেশ, তার কূটনৈতিক মিশন এবং ভারতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সাধারণ ভারতীয়দের উসকানি দেওয়ার জন্য প্রচার করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের উদ্ধৃতি দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন তালিকাভুক্ত অপরাধী, যার দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু ঘটেছিল। যখন তিনি তার মুসলমান সহযোগীর সঙ্গে চাঁদাবাজি করছিলেন, যাকে একসময় গ্রেফতারও করা হয়েছিল। সংখ্যালঘু আচরণের চোখে এই অপরাধমূলক কাজকে চিত্রিত করা সত্য নয় বরং বিভ্রান্তিকর।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক ও পারস্পরিক আস্থার চেতনাকে ক্ষুণ্ন করে এমন বিভ্রান্তিকর আখ্যান ছড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্য ভারতের বিভিন্ন মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, ঘটনাটি মোটেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা। নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী অমৃত মন্ডল ওরফে সম্রাট চাঁদা দাবির উদ্দেশে এলাকায় উপস্থিত হন এবং বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে প্রাণ হারান। তিনি ইতিপূর্বে ২০২৩ সালে দায়ের করা হত্যা এবং চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে।
পুলিশের বরাতে সরকার জানিয়েছে, পুলিশ ঘটনাস্থল হতে সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে একটি বিদেশি পিস্তল ও একটি পাইপগানসহ আটক করে। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, যে কোনও ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, গণপিটুনি বা সহিংসতা সরকার কোনোভাবেই সমর্থন করে না। এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
একইসঙ্গে সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, একটি মহল নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসদুদ্দেশ্য প্রণোদিত। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।
সরকার সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে