কুয়াশার দাপটে বাড়ছে শীত
পৌষের শুরুতেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কুয়াশার দাপট বেড়েছে। বিশেষ করে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশা বিরাজ করছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিন এই কুয়াশা আরও ঘন হতে পারে। এর ফলে দিনের তাপমাত্রা তুলনামূলক কম অনুভূত হবে এবং শীতের প্রকোপ বাড়বে। কোথাও কোথাও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রোববার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকার আকাশ ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন। সকাল ১০টার দিকে কিছু সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিললেও দিনভর কুয়াশা পুরোপুরি কাটেনি। একই চিত্র দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে—১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পরেই রয়েছে চুয়াডাঙ্গা, সেখানে তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফে—৩১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবীর বলেন, শীতকালে কুয়াশা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে আগামী কয়েক দিন কুয়াশার ঘনত্ব আরও বাড়তে পারে। দিনে কুয়াশা থাকলে সূর্যের আলো দেরিতে বা কম পৌঁছায়। ফলে তাপমাত্রা খুব বেশি না কমলেও শীতের অনুভূতি বেশি হয়।
তিনি জানান, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে কুয়াশা বেশি থাকবে। এসব এলাকায় দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম অনুভূত হতে পারে। চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে এবং কোথাও কোথাও শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংজ্ঞা অনুযায়ী, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ দশমিক ১ থেকে ৮ ডিগ্রি হলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং ৪ দশমিক ১ থেকে ৬ ডিগ্রি হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রির নিচে নেমে গেলে তা অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত হয়।
রাজশাহীতে গতকাল দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি। পুরো দিনই কুয়াশায় ঢাকা ছিল প্রকৃতি। উত্তরের হিমেল বাতাসে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, এক সপ্তাহ ধরে শীতের তীব্রতা ধীরে ধীরে বাড়ছে।
রোববার সকাল ৬টায় রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা ছিল ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় সারাদিনই হিমশীতল অনুভূতি ছিল।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, কুয়াশার কারণে সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারছে না। এ কারণে তাপমাত্রা খুব বেশি না কমলেও শীত বেশি লাগছে।
উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে কনকনে ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশায় শীত জেঁকে বসেছে। গতকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত সেখানে সূর্যের দেখা মেলেনি। চারদিক ঢেকে ছিল ঘন কুয়াশায়। সড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করেছে। কুয়াশার কারণে জেলার নৌঘাটগুলো থেকে সকালে প্রায় তিন ঘণ্টা বিলম্বে নৌকা ছেড়েছে।
কুড়িগ্রামে সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। স্থানীয় কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র বলেন, এই পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন থাকতে পারে।
কুড়িগ্রামে শীতের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। দিনমজুর মহুবর আলী বলেন, সকালে এত ঠান্ডা থাকে যে কাজে বের হতে দেরি হয়। অনেক সময় কাজও পাওয়া যায় না।
জয়পুরহাটে টানা চার দিন ধরে পশ্চিমা বাতাস ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত সেখানে সূর্যের দেখা মেলেনি। মহাসড়কে যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে। যাত্রী সংকটে পড়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা।
নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানায়, জয়পুরহাট ও আশপাশের এলাকায় রোববার ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়াশা এতটাই ঘন যে, হালকা বৃষ্টির মতো অনুভূত হচ্ছে।
জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শিশু ও বয়স্করা এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রাশেদ মোবারক জুয়েল বলেন, শীত বাড়ায় শিশু ও বৃদ্ধদের ঘরের বাইরে কম বের হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, তাপমাত্রা খুব নিচে না নামলেও কুয়াশা ও হিমেল বাতাসের কারণে আগামী কয়েক দিন শীতের অনুভূতি আরও বাড়তে পারে। উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষকে এ সময় বাড়তি সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে