দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার নিয়ম বেশিদিন থাকবে না: লিংকডইনের প্রতিষ্ঠাতা
দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার নিয়ম বেশিদিন থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন লিংকডইনের প্রতিষ্ঠাতা রেইড হফম্যান। তিনি বলেন, পুরো বিশ্বে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজের মডেল ২০৩০ সালের মধ্যে অচল হয়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এমন সময় আসছে, যেখানে বাঁধাধরা সময়ে কাজের প্রয়োজন থাকবে না। একটানা কাজ করার বিষয়টি ইতিহাস হয়ে যেতে পারে। ২০৩৪ সালের মধ্যে চাকরিরত কর্মীরা বরাদ্দ সময় মেনে কাজ করার বদলে তাদের সুবিধামতো চুক্তি অনুযায়ী কাজ করার পথ বেছে নেবেন।
এই প্রবণতার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রেইড হফম্যান অনেকগুলো কারণ দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, 'কর্মক্ষেত্রে সময়ের পরিবর্তনের জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিছুটা দায়ী হলেও সেটি আসল কারণ নয়।'
তার মতে, কর্মক্ষেত্রে নানা সমস্যা এবং চাকরির ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতা কর্মঘণ্টার প্রচলিত এই ধারায় আমূল পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে।
আমেরিকায় প্রথম চালু হয়েছিল দৈনিক ৮ ঘণ্টা বা সপ্তাহে ৫ দিন কাজ করার নিয়ম। আজও যা পুরো বিশ্বে স্বীকৃত। এই নিয়ম কোনো সংস্থা করেনি বা আইন করে করা হয়নি। এর নেপথ্যে ছিল শ্রম, রাজনৈতিক সমঝোতা এবং অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার দীর্ঘ জটিল সমীকরণ।
প্রতি দিন ৮ ঘণ্টা বা সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজের সময়সীমা চালু হওয়ার আগে বিশ্বজুড়ে কাজের সময়কাল আরও বেশি ছিল। সপ্তাহে ৮০ থেকে ১০০ ঘণ্টা কাজের নজিরও খুঁজে পাওয়া গেছে শিল্প বিপ্লবের সময়ে। এমনকি কর্মক্ষেত্রে শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনাও ছিল।
১৮০০ সাল থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে কর্মঘণ্টা ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে। ১৯২০ সালে এসে সময়সীমা থিতু হয়। আমেরিকা ও ইউরোপের শ্রমিক সংগঠনের ক্রমাগত আন্দোলনের ফলে কর্মীদের কাজের পরিবেশ উন্নত হয় এবং কর্মঘণ্টা কমে।
১৯২৬ সালে হেনরি ফোর্ডের সংস্থা “ফোর্ড মটোরস” দিনে ৮ ঘণ্টা, ৫ দিনের কর্মসপ্তাহ চালু করে। ফোর্ড ঘোষণা করেছিলেন যে, ৮ ঘণ্টা কাজ করলে প্রত্যেক শ্রমিককে দিনে ৫ ডলার দেবেন, যা সেই সময় একজন শ্রমিকের গড় পারিশ্রমিকের প্রায় দ্বিগুণ ছিল।
ফোর্ড মানতেন, অল্প সময়ের জন্য কাজ করালে শ্রমিকের কাজ করার গতি বেড়ে যায় এবং উৎপাদন বাড়ে। এই নীতি ফলপ্রসূ হওয়ায় খুব তাড়াতাড়ি অন্যান্য সংস্থা ফোর্ডের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে শুরু করে।
এরপর ১৯৩০ সালে “কেলগস” সংস্থার মালিক ডব্লিউ কে কেলগ শ্রমিকদের বেতন কিছুটা কমিয়ে ৮ ঘণ্টার শিফ্টের পরিবর্তে ৬ ঘণ্টা শিফ্ট চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
তবে পরবর্তী ক্ষেত্রে এই বাঁধাধরা সময়সীমার বহু পরিবর্তন হয়। তর্ক-বিতর্কের পর আমেরিকায় “ফেয়ার লেবার স্ট্যান্ডার্ডস অ্যাক্ট” চালু করা হয়। নিয়ম করা হয় নিয়োগকর্তারা সপ্তাহে ৪৪ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন এমন সমস্ত কর্মচারীদের অতিরিক্ত বেতন দেবেন। দু’বছর পর এই আইন সংশোধন করে কর্মসপ্তাহ কমিয়ে ৪০ ঘণ্টা করা হয়।
১৯৪০ সাল থেকে আমেরিকায় সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা হিসেবে আইনে পরিণত হয়। তখন থেকে সারা বিশ্বে চালু হয় ৮ ঘণ্টা কাজের সময়।
এদিকে ৮ ঘণ্টার কাজের সময় বাস্তবে প্রয়োগ হয় না, এমন অভিযোগ করেছেন বিশ্বের বহু দেশের কোটি কোটি চাকরিজীবীরা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে