কারাবন্দি সাংবাদিকদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূসকে সিপিজের চিঠি
বাংলাদেশে কারাবন্দি ৪ সাংবাদিককে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। সংস্থাটির দাবি, ওই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো 'প্রতিহিংসামূলক' এবং এর স্বপক্ষে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের অভাব রয়েছে। বরং সাংবাদিকতা ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার জেরে প্রতিহিংসাবশত তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে তারা মনে করে।
চার সাংবাদিক হলেন- ফারজানা রূপা, শাকিল আহমেদ, মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্ত। আগামী ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে গত সোমবার ই-মেইলে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর এই চিঠি পাঠায় সিপিজে। চিঠিতে উল্লেখ করা সাংবাদিকদের মুক্তি দিতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি এই আহ্বান জানায় সংস্থাটি।
নিউইয়র্কভিত্তিক সংস্থা সিপিজে কারাবন্দি চার সাংবাদিকদের পরিবারের বরাত দিয়ে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের মানবেতর পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, তাদের ৩৬ বর্গফুটের সেলে রাখা হয়েছে। সেখানে দরজার বদলে লোহার শিক থাকায় তারা শীত ও মশার উপদ্রবের মধ্যে আছেন। কংক্রিটের মেঝেতে কোনো তোশক ছাড়াই তাদের ঘুমাতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত খাবার ও চিকিৎসাসেবা থেকেও তারা বঞ্চিত।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের নভেম্বরে দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস স্বীকার করেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি করে হত্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে এবং সরকার তা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সিপিজে বলছে, গত বছরের ৮ আগস্ট ড. ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর এই চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নতুন করে হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় বারবার নাকচ হয়েছে তাদের জামিন।
চিঠিতে ওই সাংবাদিকদের আইনজীবী জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে সম্প্রতি হত্যা মামলা দায়েরের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সিপিজে লিখেছে, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ এবং ইন্টারন্যাশনাল কভেনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস-এ (আইসিসিপিআর) বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত রয়েছে। সুতরাং ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে কারাবন্দি সব সাংবাদিককে মুক্তি দিয়ে তাদের পরিবারের কাছে ফেরার এবং কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে চিঠিতে।
একই বিষয়ে একইদিন নিজেদের ওয়েবসাইটে এক প্রতিবেদনে সিপিজে জানায়, শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়ার আরো ৬ দেশ ভারত, আফগানিস্তান, কম্বোডিয়া ও ফিলিপাইনের সরকারকেও কারাবন্দি সাংবাদিকদের মুক্তি দিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সংস্থাটির তথ্য বলছে, বিশ্বজুড়ে কারাবন্দি সাংবাদিকদের মধ্যে ৩০ শতাংশের বেশি এশিয়ার। এ অঞ্চলের সাংবাদিকদের কারা অন্তরীণ রাখার শীর্ষে আছে চীন, মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম। গত ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এশিয়ায় অন্তত ১০৬ জন সাংবাদিক কারাগারে বন্দি আছেন। এর মধ্যে চীনে ৫০, মিয়ানমারে ২৭ এবং ভিয়েতনাম ১৬ সাংবাদিক কারাবন্দি আছেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে