সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ

জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর আদালত হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার (২০ অক্টোবর) ঢাকার ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এই আদেশ দেন।

এদিন সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় তার মা নীলা চৌধুরীর করা রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী আবিদ হাসান।

আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিনের করা অভিযোগপত্র ও অভিযুক্ত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সংযুক্ত করে নতুন করে হত্যা মামলা দায়ের করতে হবে। মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়েছে রমনা মডেল থানা পুলিশকে, যাদের পুনরায় তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আইনজীবী আবিদ হাসান বলেন, “সালমান শাহর মৃত্যুর পর তার বাবা কমর উদ্দিন রমনা থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। পরের বছর তিনি মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে রূপান্তরের আবেদন করলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। অথচ আসামি রিজভী ওরফে ফরহাদ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সালমান শাহকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছিল, তা বিস্তারিতভাবে বলেছেন। তারপরও মামলাটি আলোর মুখ দেখেনি।”

তিনি আরও জানান, “পিবিআই মামলাটির তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছিল। আদালত সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আসামিদের অব্যাহতি দিয়েছিলেন। আজ আদালত সেই আদেশ বাতিল করেছেন।”

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ২৫ বছর বয়সে সালমান শাহ (পূর্ণ নাম চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন) রাজধানীর ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে মৃত অবস্থায় পাওয়া যান। পরে তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী প্রথমে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। এক বছর পর, ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই, তিনি মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে রূপান্তরের আবেদন জানান। আদালত সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিলে সংস্থাটি ওই বছরের ৩ নভেম্বর প্রতিবেদন দেয়— যেখানে বলা হয়, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন।

এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কমর উদ্দিন চৌধুরী রিভিশন আবেদন করেন। ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠানো হয়। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট সেই প্রতিবেদনে হত্যার অভিযোগ নাকচ করা হয়।

পুত্রবিয়োগের পর কমর উদ্দিনের মৃত্যুর পর তার মা নীলা চৌধুরী মামলাটি চালিয়ে যান। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে ‘নারাজি’ দিয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করেন, যাদের তিনি ছেলের হত্যায় জড়িত বলে দাবি করেন। এরপর মামলাটি তদন্ত করে র‌্যাব; তবে আদালতের নির্দেশে পরে তদন্তভার পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিবিআই প্রতিবেদনে জানায়, সাক্ষ্য-প্রমাণ ও আলামতের ভিত্তিতে সালমান শাহর হত্যার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর আদালত সেই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের অব্যাহতি দেন।

পরে সালমান শাহর পরিবারের পক্ষ থেকে এই আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন আবেদন করা হয়। ২০২২ সালের ১২ জুন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে। দীর্ঘ শুনানির পর গত ১৩ অক্টোবর শুনানি শেষ হয় এবং আদেশের জন্য ২০ অক্টোবর তারিখ নির্ধারণ করা হয়। অবশেষে সোমবার আদালত রিভিশন মঞ্জুর করে নতুন করে হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন।