রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিতে কস্ট অডিট বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ সরকারের
রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়াতে ফাইন্যান্সিয়াল অডিটের পাশাপাশি ব্যয় নিরীক্ষা (কস্ট অডিট) বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দীর্ঘদিন আগে গেজেট প্রকাশ হলেও তা কার্যকর না হওয়ায় অধিকাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে ব্যয় নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি রয়ে গেছে, যা ধারাবাহিক লোকসানের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে আর্থিক নিরীক্ষায় মূলত হিসাব সঠিক আছে কি না—সে বিষয়টিই গুরুত্ব পায়। কিন্তু উৎপাদন ও পরিচালন ব্যয় কতটা যুক্তিসংগত, কোথায় অপচয় হচ্ছে কিংবা কোন খাতে ব্যয় অস্বাভাবিক বেশি—এসব বিষয় গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হয় না। কস্ট অডিট চালু হলে এসব দুর্বলতা চিহ্নিত করে ব্যয় কাঠামো সংস্কার করা সম্ভব হবে।
সম্প্রতি বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোতে কস্ট অডিট বাস্তবায়ন সংক্রান্ত গেজেট হালনাগাদ ও সংশোধন বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কোম্পানি আইন অনুযায়ী ২০০১ সালের ডিসেম্বরে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর জন্য প্রথম কস্ট অডিটের গেজেট প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৩ সালে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের পাঁচটি এবং পাট খাতের ছয়টি কোম্পানি, আর ২০০৯ সালে সার, ওষুধ ও বস্ত্র খাতের বিভিন্ন কোম্পানির জন্য একই ধরনের গেজেট জারি করা হয়।
তবে ১৬ থেকে ২৪ বছর আগে জারি হওয়া এসব গেজেট এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। সরকার মনে করছে, উৎপাদন ও পরিচালন ব্যয়ের দক্ষতা যাচাই ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। তাই কস্ট অডিট কার্যকর হলে ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহি বাড়বে এবং লোকসান কমে সরকারের আর্থিক চাপও হ্রাস পাবে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মতামত নেওয়া হবে। এরপর কোম্পানির নাম নির্দিষ্ট না করে সব পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য কস্ট অডিট বাধ্যতামূলক করতে গেজেট সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, সময়ের সঙ্গে আগের গেজেটে উল্লেখিত খাতগুলোতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বেড়েছে, আবার কিছু প্রতিষ্ঠান তালিকা থেকেও বাদ পড়েছে। বর্তমানে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বেড়ে ৫২টি, ওষুধ খাতে ৩৪টি, চিনিকল ১৬টি এবং বস্ত্র খাতে ৫৮টিতে দাঁড়িয়েছে।
বৈঠকে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) প্রতিনিধিরা জানান, কস্ট অডিট ব্যয় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের পাশাপাশি কার্যক্রমের দক্ষতা বৃদ্ধি, সরকারি ভর্তুকির সঠিক ব্যবহার, ন্যায্য ট্যারিফ নির্ধারণ এবং খরচ মূল্য বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে অপচয়, অদক্ষতা ও দুর্নীতি কমিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোকে লাভজনক ও টেকসইভাবে পরিচালনায় সহায়তা পাওয়া যাবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে