ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের ঢল, মহাসড়কজুড়ে যানজট ও দুর্ভোগ
পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র একদিন। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে রাজধানী ছাড়ছেন কর্মজীবী মানুষ। তবে এবারের ঈদযাত্রায় বিভিন্ন মহাসড়কে যানজট, সড়ক সংস্কার কাজ, দুর্ঘটনা ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে ঘরমুখো মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ২৩ কিলোমিটার যানজট
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে টাঙ্গাইলের আশেপুর বাইপাস থেকে যমুনা সেতুর পূর্বপ্রান্ত পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট দেখা দেয়। মহাসড়কে থেমে থেমে চলছে যানবাহন। এই মহাসড়ক দিয়ে এক দিনে প্রায় ৫২ হাজার যানবাহন পার হয়েছে বলে জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
এলেঙ্গা হাইওয়ে থানার ইনচার্জ (ওসি) শরীফ উদ্দিন বলেন, সিরাজগঞ্জ অংশে ধীরগতির কারণে যানজট তৈরি হয়েছে। এছাড়া কিছু জায়গায় গাড়ি বিকল হওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে। আমাদের টিম ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
পদ্মা সেতুতে ঢল
দক্ষিণাঞ্চলগামী ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে পদ্মা সেতু এলাকায়। মাওয়া প্রান্তে দেখা গেছে গাড়ির দীর্ঘ সারি। তবে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে সেতু কর্তৃপক্ষ ৭টি টোল বুথের পাশাপাশি মোটরসাইকেলের জন্য ৩টি আলাদা বুথ চালু করেছে। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও ভোরে কিছু সময়ের জন্য মাওয়া টোল প্লাজা এলাকায় চাপ বাড়ে।
সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ জানান, অতিরিক্ত মোটরসাইকেলের কারণে সাময়িক চাপ তৈরি হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা নিশ্চিতে অতিরিক্ত টহল দিচ্ছে এবং স্পিড গান ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে গাড়ির গতি।
ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে নির্মাণকাজের ভোগান্তি
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ি এলাকায় মহাসড়কে চলছে সড়ক ও ওভারপাস নির্মাণকাজ। এতে সরু রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলায় যানজট দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত পান্থাপাড়া-বকচর ও পলাশবাড়ি চাররাস্তা মোড় এলাকায় দীর্ঘ গাড়ির সারি দেখা গেছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) গাইবান্ধা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, সাসেক-২ প্রকল্পের অধীনে নির্মাণকাজ চলমান। আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। তবে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কিছুটা দেরি হচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ১৫ কিলোমিটার যানজট
সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে একটি ট্রাক দুর্ঘটনার পরপরই আরও দুটি গাড়ি পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে ঢাকামুখী লেনে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। যদিও ১১টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়, কিন্তু দীর্ঘ যানজট রয়ে গেছে।
হাইওয়ে পুলিশ চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মাহবুব আলম বলেন, একটি দুর্ঘটনার পর সেটি দ্রুত অপসারণে আমরা কাজ করি। তবে সড়কের পাশে অবৈধ পার্কিং ও যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত চলাচলও এই যানজটে ভূমিকা রেখেছে।
গাজীপুর ও সাভারে চরম ভোগান্তি
গাজীপুরের পোশাক কারখানায় ছুটি শুরু হওয়ায় চন্দ্রা, চন্দ্রা চৌরাস্তা ও বাইপাইল এলাকাগুলোতে সকাল থেকেই যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। চন্দ্রা থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার জুড়ে থেমে থেমে গাড়ি চললেও বড় ধরনের যানজট দেখা যায়নি। এছাড়া নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে চক্রবর্তী থেকে জিরানী পর্যন্ত এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বলিয়ারপুর থেকে জোরপুর পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মানুষ একসঙ্গে রওনা হওয়ায় এই চাপ তৈরি হয়েছে। আমরা বাস সংকট মেটাতে ভাড়ায় চালিত অন্যান্য পরিবহন ব্যবস্থাপনার দিকেও নজর দিচ্ছি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে