Views Bangladesh Logo

গুমে নিরাপত্তা বাহিনীর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বিদেশি সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

গুম-সংক্রান্ত ঘটনার তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত কমিশন তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এসব ঘটনার পেছনে শুধু দেশীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্যই নয়, বরং বিদেশি অংশীদারদেরও ভূমিকা রয়েছে। একইসঙ্গে বাহিনীর অভ্যন্তরে মতবিরোধ ও দ্বিধা এ ধরনের অপরাধকে জটিল করে তুলেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের একটি অংশ গুমসহ বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করেছিল। যার কারণে অনেককে পেশাগত, সামাজিক এবং পারিবারিকভাবে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। এক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, নিরপেক্ষ মত প্রকাশের কারণে তাকে সহকর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে নতুন পদায়নের আগেই তার বিরুদ্ধে সতর্ক বার্তা প্রচার করা হয়। এমনকি তার পরিবারের ওপরও নজরদারি চালানো হতো।

এক যুবক কমিশনকে জানান, তার ভাই একটি গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত অবস্থায় রাজনৈতিক ‘বিরোধীদের’ তালিকা তৈরির নির্দেশ পান। পরে দেখা যায়, সেই তালিকাভুক্তদের একে একে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তার ভাই এবং পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এক সৈনিক কমিশনকে জানান, তাকে একটি গোপন বন্দিশিবিরে পাঠানো হয়েছিল, যেখানে বন্দিদের ওপর নৃশংস নির্যাতন চালানো হতো। বন্দিদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা বলাও নিষিদ্ধ ছিল। নির্দেশ ছিল ইশারা বা শিসের মাধ্যমে যোগাযোগের। এই ধরনের বিবরণ একাধিক ভুক্তভোগীর জবানিতে উঠে এসেছে। তবে ওই সৈনিক জানান, তিনি কখনো কখনো নিজের খাবার বন্দিদের দিয়ে দিতেন। এক বন্দি জানিয়েছেন, সেই খাবারেই তিনি বেঁচে ছিলেন।

একজন র‌্যাব গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, তাকে দীর্ঘদিন ধরে আটক থাকা এক বন্দিকে হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তবে তিনি তা অমান্য করেন এবং দায়িত্বপালন চালিয়ে যান। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সবসময় অবাধ্যতার পরিণাম তাৎক্ষণিক না হলেও অনিবার্য ছিল।’ উদাহরণ হিসেবে জানানো হয়, দুই র‌্যাব সদস্য লিখিতভাবে তাদের গোয়েন্দা প্রধানকে জানিয়ে দেন, তারা বেআইনি কোনো অভিযান বা গুলি চালানোর আদেশ মানবেন না। এমন চিঠি বিগত সরকারের পতনের পর গণভবন থেকেও উদ্ধার হয়।

কমিশনের প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, এই অপরাধগুলোকে নানাভাবে ‘অঘোষিত অনুমোদন’ দেয়া হয়েছিল। অনেকক্ষেত্রে গুমের শিকার ব্যক্তিদের লাশ ট্রেনলাইনের পাশে ফেলে দেয়া বা চলন্ত যানবাহনের নিচে ফেলে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এসব ঘটনার পেছনে আন্তর্জাতিক সংযোগও ছিল। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে কিছু সহযোগিতার পাশাপাশি, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের নামে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ।

এক ভুক্তভোগী কমিশনকে জানিয়েছেন, তাকে ডিবি হেফাজতে আমেরিকান দুই নাগরিক জেরা করেছিলেন। যদিও তারা নির্যাতনে সরাসরি অংশ নেননি, তবে তাদের উপস্থিতিই বেআইনি আটক ব্যবস্থার পক্ষে একধরনের বৈধতা জুগিয়েছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

কমিশন বলেছে, ‘গুম কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি ছিল একটি কাঠামোগত অপরাধপ্রবণতা, যার পেছনে ছিল দেশি-বিদেশি অংশীদারদের সম্মিলিত যোগসূত্র।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ