গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ: প্রেস উইং
গোপালগঞ্জের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের একটি সংঘবদ্ধ চক্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন ছবি পোস্ট করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
বুধবার (১৭ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে প্রেস উইং জানায়, “১৬ জুলাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ নিয়ে নানা পোস্ট ছড়ানো হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল এ দিনের সহিংস ঘটনার মনগড়া বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করা।”**
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একটি সংগঠিত প্রোপাগান্ডা অভিযানের অংশ হিসেবে প্রভাবশালী আ.লীগপন্থীরা পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন একাধিক ছবি শেয়ার করেছেন, যা এই দিনের সহিংসতার দৃশ্য বলে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এস এম জাকির হোসেন এবং শেখ হাসিনার উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকনসহ কয়েকজন ব্যক্তি নিজেদের সামাজিক মাধ্যমে ছবি পোস্ট করে দাবি করেন, “ইউনূস গ্যাং” এবং বিরোধীদলীয় কর্মীরা সাধারণ মানুষকে হিংসাত্মকভাবে আক্রমণ করছে।
একটি পোস্টে দেখা যায়, এক কিশোরকে আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন বহন করছে, পেছনে আগুন জ্বলছে এবং উত্তেজিত জনতা রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। ছবিটি গোপালগঞ্জের সহিংসতা হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও অনুসন্ধানে জানা গেছে, এটি ২০২৪ সালের ১০ আগস্টের একটি ভিন্ন ঘটনার ছবি।
একইভাবে আরও একটি বহুল প্রচারিত ছবিতে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এক কর্মকর্তাকে বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এটি নিয়েও বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিয়েছেন জাকির হোসেন ও আশরাফুল আলম খোকন।
প্রেস উইংয়ের ভাষ্য, “বাস্তবতা হলো, ছবিটি ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপি সমাবেশের সময়ের, যেখানে ডিবি কর্মকর্তা কনককে জনতার দিকে গুলি ছুঁড়তে দেখা যায়।”
এস এম জাকির হোসেন আরও একটি ছবি পোস্ট করেন যেখানে হাসপাতালে গুরুতর আহত রোগীদের চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। তিনি দাবি করেন, এটি গোপালগঞ্জের সহিংসতার দৃশ্য। কিন্তু প্রেস উইং বলছে, “এই ছবিটিও ভিন্ন ঘটনার। ছবিটি ২০ মার্চ ২০২৩ সালে এক সম্পূর্ণ আলাদা ঘটনার সময় তোলা হয়েছিল।”
এছাড়া ভুয়া প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি শিশুর ছবি ছড়ানো হয়, যেখানে তাকে লাঠি হাতে দেখা যাচ্ছে। দাবি করা হয়, ছবিটি ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে তোলা এবং ওই শিশু নাকি সহিংসতায় অংশ নিয়েছিল।
প্রেস উইং বলছে, “ছবিটি এই মিথ্যা বার্তা ছড়াতে ব্যবহার করা হয় যে, রাজনৈতিক সহিংসতায় শিশুদের পর্যন্ত জড়ানো হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ছবির একটি ডিজিটালি সম্পাদিত (সম্ভবত এআই-নির্মিত) সংস্করণ শেয়ার করেন নিঝুম মজুমদার, যিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একজন অনলাইন প্রোপাগান্ডিস্ট হিসেবে পরিচিত।”
তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ছবিটি গোপালগঞ্জে নয়, বরং গাজীপুরের সফিপুর এলাকায় ধারণ করা একটি ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট। মূল ভিডিওটি ২০২৩ সালের আগস্টে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এছাড়া আওয়ামী লীগপন্থী অ্যাকাউন্টগুলো ভিত্তিহীনভাবে দাবি করেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। প্রেস উইং বলছে, এসব ভুয়া প্রচারণা জনমতকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হচ্ছে।
প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “মাঠের বাস্তব ঘটনার বিপরীতে আওয়ামী লীগপন্থীর সামাজিক মাধ্যম চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর, প্রাসঙ্গিকতা-বর্জিত ও মনগড়া ছবি ছড়িয়ে টাইমলাইন ভরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে।”
সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, গোপালগঞ্জ শহরে নির্ধারিত সমাবেশ শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়ি বহরে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সমর্থকরা। এই আক্রমণ দ্রুতই বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়।
রিপোর্টে বলা হয়, সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হন। পুলিশের গাড়ি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) একটি গাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এজন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৬ জুলাই রাত ৮টা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কঠোর কারফিউ জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে