Views Bangladesh Logo

'চাঁদা না পেয়ে' পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা, আটক ২

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে কম্পাউন্ডে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যবসায়ী চাঁদ মিয়া ওরফে সোহাগ। সেখানে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। শুধু হত্যা নয়—মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর ঘাতকেরা লাশের ওপর লাফিয়ে উল্লাস করেছে। ঘটনাস্থলের একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মহিন ও তারেক নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মহিন ঘটনার মূল হোতা। এছাড়া সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সবাইকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান।

ঘটনাটি গত বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে ঘটে। ভিডিওতে দেখা যায়, দুই তরুণ একটি প্রায় বিবস্ত্র, রক্তাক্ত দেহ টেনে বাইরে নিয়ে আসছে। একজন ঘুষি মারছে, আরেকজন দেহের ওপর লাফাচ্ছে। পরে আরও কয়েকজন এসে একইভাবে মৃতদেহের ওপর লাথি ও আঘাত করে। চারপাশে থাকা মানুষজন হতবিহ্বল হয়ে দেখলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।

নিহত সোহাগ একজন পুরান ঢাকার ভাঙারি ব্যবসায়ী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। স্ত্রী, এক কন্যা ও এক পুত্র নিয়ে কেরানীগঞ্জের কদমতলীর মডেল টাউনে বসবাস করতেন। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, ঘটনার দিন দুপুরে পূর্বপরিচিত কয়েকজন তরুণ ‘মীমাংসার’ কথা বলে সোহাগকে ডেকে নেয়। পরে সন্ধ্যায় তাকে হত্যা করা হয়।

নিহতের স্ত্রী লাকী বেগম ও ভাগনি সাদিয়া আক্তার জানান, স্থানীয় মহিন নামে এক যুবদল নেতা পরিচয়ধারী ব্যক্তি ও তার সঙ্গীরা দীর্ঘদিন ধরে সোহাগের ব্যবসার অর্ধেক দাবি করে আসছিল। সোহাগ রাজি না হওয়ায় তাকে হুমকি দেয়া হয় এবং হত্যার আগের দিন গুদামে গুলি চালানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সোহাগকে প্রথমে মারধর করে মিটফোর্ড হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। সোহাগ প্রাণ বাঁচাতে পুলিশের সাহায্য চেয়েছিলেন বলেও জানান তারা। একপর্যায়ে ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে দেয়া হয়, যাতে মৃত্যু নিশ্চিত হয়। পরে মৃতদেহটি হাসপাতালের সামনের রাস্তায় ফেলে দেয়া হয়।

ঘটনার পর সোহাগের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১৫–২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এর মধ্যে মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিনের কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে।

এজাহারে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়িক আধিপত্য নিয়ে সোহাগের সঙ্গে আসামিদের বিরোধ চলছিল। এরই জেরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। হামলার সময় ইট, রড, সিমেন্টের ব্লক দিয়ে আঘাত করা হয় এবং তাকে বিবস্ত্র করে লাশের ওপর পিষে পিষে হত্যার ভয়াবহতা নিশ্চিত করা হয়।

পুলিশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা এ ঘটনার বীভৎসতায় বিস্মিত। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এমন ভয়াবহতা আগে দেখিনি। তরুণদের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। রক্তাক্ত লাশের ওপর যে আচরণ করা হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়।’

যুবদলের ডিএসসিসির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের একজন নেতা জানান, নিহত সোহাগ এবং অভিযুক্ত মহিন কেউই বর্তমানে দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন না। তারা আগে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও এখন দলীয় কাঠামোর বাইরে ছিলেন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ