Views Bangladesh Logo

পর্ব-৪

রাষ্ট্রীয় সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারে ‘বিটিভি, বেতার ও বাসস’কে এক ছাতার নিচে আনা প্রয়োজন

Kamal  Ahmed

কামাল আহমেদএর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকার

হুবিধ ও বহুমুখী সংকটে জর্জরিত বাংলাদেশের গণমাধ্যমের যুগোপযোগী, কার্যকর সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের ১১ সদস্যের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন এরই মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যাতে গণমাধ্যমের মালিকানা, আয়ব্যয়, বিজ্ঞাপন বাজার, আর্থিক নিরাপত্তা, বিটিভি-বেতার-বাসস সম্পর্কে করণীয়, সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও সুরক্ষাসহ নানা বিষয়ে ২০ দফা সুপারিশ করেছেন কামাল আহমদের নেতৃত্বাধীন এই কমিশন। এই ২০ দফার অধীনে রয়েছে আরও বেশ কিছু উপ দফা। যাতে বিভিন্ন বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। একইসঙ্গে এই বিষয়গুলো কার্যকরে ‘বাংলাদেশ গণমাধ্যম কমিশন অধ্যাদেশ: ২০২৫’-এর খসড়াও পেশ করেছে কমিশন। এই খসড়া অধ্যাদেশ এখন অন্তর্বর্তী সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা প্রত্যাশা করছেন খুব দ্রুত এই কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো আইনি ভিত্তি পাবে। এই কমিশন গঠন, কার্যক্রম, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধা-প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কামাল আহমেদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাহাত মিনহাজ। সেই সাক্ষাৎকার ভিউজ বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। ছয় পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ প্রকাশিত হলো চতুর্থ পর্ব:

ভিউজ বাংলাদেশ: গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন ‘বেতার-বিটিভি এবং বাসস’কে নিয়ে বিস্তারিত সুপারিশ তুলে ধরেছে। তিনটি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে এক ছাতার নিচে একটা বার্তাকক্ষে কাজ করার পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। এটা কি সম্ভব বাংলাদেশে?

কামাল আহমেদ: অবশ্যই সম্ভব। কেন সম্ভব নয়? সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। আর কিচ্ছু নয়। আর এখন হলো সবচেয়ে উপযুক্ত সময় এগুলো পুনর্গঠন করার। বাংলাদেশ সরকারের অনেকগুলো উপকেন্দ্রসহ একটা টেলিভিশন কেন্দ্র রয়েছে। এই টেলিভিশন চ্যানেল আছে সরকারি মালিকানায়। সেই টেলিভিশন চ্যানেলের বার্তাকক্ষে আপনি যান, সেখানে সেন্ট্রাল নিউজ ম্যানেজমেন্ট বলে কিছু নেই। একটা অস্থায়ী ভিত্তিতে (অ্যাডহক বেসিসে) নিউজরুম আছে। কয়েকটা টেবিল-চেয়ার, কয়েকটা বিচ্ছিন্ন কম্পিউটার, যার একটার সঙ্গে আরেকটার সংযোগ (নেটওয়ার্ক) নেই। আর সরকারি আমলা ওই বার্তাকক্ষ পরিচালনা করেন। পেশাদার সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা- সেগুলো তাদের সেভাবে নেই।

ভিউজ বাংলাদেশ: বেতারের ক্ষেত্রে কী অবস্থা?

কামাল আহমেদ: বিটিভির মতো একই অবস্থা বেতারেও। তাদের তো পেশাদার বার্তাকক্ষ (প্রফেশনাল নিউজরুম) থাকা দরকার। সেই ঘাটতিটা পূরণ করার ব্যবস্থা হতে পারে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)। কারণ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার একটি যথাযথ সংবাদ সংস্থা হিসেবে প্রাসঙ্গিকতাটা (রেলেভেন্স) কমে যাচ্ছে। এখন তাদের সাবস্ক্রাইবার বা গ্রাহক কমতে কমতে ৪০-৪৫ এ এসে ঠেকেছে।

ভিউজ বাংলাদেশ: ৪০-৪৫টির মধ্যে কি সরকারি প্রতিষ্ঠানও আছে?

কামাল আহমেদ: দুই-একটা পত্রিকা আছে, টেলিভিশন আছে। আসলে প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে বাসস। তাদের তো প্রাসঙ্গিক থাকতে হবে। আমরা সে কারণেই বলেছি, এটাকে নতুন একীভূত প্রতিষ্ঠানের বার্তাকক্ষে পরিণত করা হোক। রেডিও ও টেলিভিশনের বার্তাকক্ষ হিসেবে এটা কাজ করুক। বাসস নিউজ প্রডিউস করে দেবে, সেটা রেডিও ফরম্যাটে রেডিওতে যাবে, টেলিভিশন ফরম্যাটে টিভিতে যাবে। আর অনলাইন পোর্টালও বাসস-ই ব্যবস্থাপনা (মেইনটেইন) করবে। বর্তমানে বাসস যাদের সার্ভিস দিচ্ছে তাদের কারও সঙ্গেই চুক্তি লঙ্ঘন করার দরকার নেই। তারা সার্ভিস কন্টিনিউ করবে। এটা হলো রাষ্ট্রীয় সম্পদের সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহারের একটা পন্থা।

ভিউজ বাংলাদেশ: কিন্তু এই কাজে বাধা কী কী?

কামাল আহমেদ: বাধা হতে পারে সরকারি চাকরির বিষয়টি। বর্তমান কর্মীরা সরকারি চাকরির সুযোগ-সুবিধা ছাড়তে আগ্রহী নন। আমরা কমিশনের তরফ থেকে বলেছি, যারা এখন চাকরিতে আছেন, তাদের সুযোগ-সুবিধা চাকরি জীবন পর্যন্ত অব্যাহত রাখুক। তাদের সেই সুযোগ দেয়া হোক; কিন্তু তারা একীভূত স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী হবেন। যদি তারা সেটা না হতে চায়, সরকার অন্য বিভিন্ন দপ্তরে তাদের আত্মীকরণ করে নেবে অন্য চাকরিতে। তাদের এই সৃজনশীল খাতে থাকার দরকার নেই। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আপনি যদি সরকারি অন্য কোনো বিভাগেও যেতে চান না অথবা একীভূত ব্যবস্থায় থাকতে চান না তাহলে আপনি আপনার পাওনা-দাওনা নিয়ে চাকরির অবসান ঘটান।

ভিউজ বাংলাদেশ: এই প্রতিষ্ঠানগুলোর জনবল কেমন?

কামাল আহমেদ: টেলিভিশনের বোধহয় হাজার দেড়েক। রেডিওতেও প্রায় সমপরিমাণ। সব মিলিয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার। তাদের জন্য এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে না? এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য আছে। সব রাজনৈতিক দল অতীতে বলেছে, সরকারি সংবাদমাধ্যমগুলোর স্বায়ত্তশাসন হোক। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হোক। যে প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য আছে, জাতীয় আকাঙ্ক্ষা আছে এগুলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হোক, সেটা কি মাত্র তিন-সাড়ে তিন হাজার লোকের স্বার্থের জন্য বাস্তবায়ন হবে না? এটা কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে?

ভিউজ বাংলাদেশ: প্রতি বছর এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় কেমন?

কামাল আহমেদ: প্রতি বছর বিটিভি, বেতার ও বাসস-এর জন্য ৫০০ কোটি টাকার উপরে খরচ হয়। ৩২০ কোটি টাকা বিটিভির জন্য, ২০৫ কোটি টাকা রেডিওর জন্য এবং ৩৮ কোটি টাকা বাসস-এর জন্য। এই টাকার মূল্য (ভ্যালু ফর মানি) যদি চিন্তা করা হয় তাহলে তো এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমার ধারণা, বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের চাইতে বিটিভির বার্ষিক খরচ বেশি।

ভিউজ বাংলাদেশ: এটাকে তো আমরা অর্থনীতির ভাষায় ‘সাদা হাতি প্রকল্প’ বলে তুলনা করতে পারি...

কামাল আহমেদ: সেজন্যই এটাকে যৌক্তিক একটা পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া জরুরি। আমরা সেই আলোকেই সুপারিশগুলো করেছি।
(চলবে)


আরো পড়ুন
পর্ব-৩: বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনের বাজার এক ধরনের স্যাচুরেটেড মার্কেট

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ