বেরোবি শিক্ষক মাহমুদুল হককে জামিন দিয়েছে আদালত
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হককে জামিন দিয়েছেন রংপুরের একটি আদালত। তিনি ২০২৪ সালের জুলাই মাসের আন্দোলনের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা মুদি দোকানি ছমেস উদ্দিনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দায়ের করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
রবিবার (২২ জুন) বিকেলে রংপুর মেট্রোপলিটন সেশন জজ আদালতের বিচারক মোসা. মারজিয়া খাতুন শুনানি শেষে তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে, একই দিন সকালে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১-এ জামিন আবেদন করা হলে বিচারক মো. সইবুর রহমান ২৪ জুন শুনানির দিন ধার্য করেন। পরে, তাৎক্ষণিক জামিনের জন্য সেশন কোর্টে আবেদন করা হলে আদালত তা মঞ্জুর করে।
এই মামলাকে কেন্দ্র করে বেরোবির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা আদালত চত্বরে বিক্ষোভ করেন এবং মাহমুদুল হকের নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। তাঁরা মামলাটিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক’ বলে উল্লেখ করেন।
মাহমুদুল হককে ১৯ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। মামলাটি দায়ের করা হয় ছমেস উদ্দিনের মৃত্যুর ১০ মাস পর। চলতি বছরের ৩ রা জুন মামলা দায়ের করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, রংপুরের রাধাকৃষ্ণপুর এলাকার মুদি দোকানি ছমেস উদ্দিনকে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মী মারধর করেন এবং পরে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অভিযোগে আরও বলা হয়, পুলিশ ও হামলাকারীরা ছমেসের মৃত্যু দেখার পর ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। মৃত ব্যক্তির স্ত্রী আমেনা বেগম এজাহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করেন, যাদের মধ্যে ৫৪তম নাম মাহমুদুল হকের। তাকে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে মামলার একাধিক অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ছমেস উদ্দিনের স্ত্রী ও ছেলে গণমাধ্যমে বলেন, ছমেস পুলিশি ধাওয়ার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এবং পুলিশ তাদের চাপ দিয়ে এ মামলা করিয়েছে। তাঁরা মামলার অভিযুক্তদের অনেককেই চিনেন না বলেও জানান।
মামলার বর্ণনা ও সরকারি নথির মধ্যেও অমিল পাওয়া গেছে। এজাহারে বলা হয়েছে, ছমেস প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান, অথচ জেলা প্রশাসনের ‘জুলাই আন্দোলনের শহিদদের’ তালিকায় তাঁর মৃত্যুর স্থান হিসেবে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাম দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই মাহমুদুল হকের গ্রেপ্তার বিভিন্ন মহলে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এর আগেও, একই মামলায় রাধাকৃষ্ণপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেনকে ১৬ জুন গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম আল মামুন বলেন, ‘বাদী মাহমুদুল হককে চিনেন না, এমনকি তাঁর নাম উল্লেখও করেননি। এই গ্রেপ্তার জুলাই আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থী। আমরা ন্যায়বিচার চেয়েছিলাম, আদালত সঠিকভাবে তার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।’
আদালত আগামী ২ জুলাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ধার্য করেছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে