সরকারি সেবায় দুর্নীতির শীর্ষে বিআরটিএ: বিবিএস
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) দেশের সরকারি সেবা খাতগুলোর মধ্যে দুর্নীতির শীর্ষে রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫’-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। জরিপ অনুযায়ী, বিআরটিএ থেকে সেবা নিতে গিয়ে অন্তত ৬৩.২৯ শতাংশ নাগরিক দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অডিটোরিয়ামে এক প্রকাশনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, দুর্নীতির তালিকায় বিআরটিএ-এর পরেই রয়েছে আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা (৫৭.৯৬ শতাংশ) এবং পাসপোর্ট অফিস (৫৭.৪৫ শতাংশ)। জরিপে অংশ নেওয়া ৩১.৬৭ শতাংশ নাগরিক স্বীকার করেছেন যে গত ১২ মাসে সরকারি সেবা নিতে গিয়ে তারা সরাসরি ঘুষ দিয়েছেন।
ঘুষ দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষদের হার (৩৮.৬২ শতাংশ) নারীদের (২২.৭১ শতাংশ) তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। ঘুষের ধরন হিসেবে ৯৮.৪৮ শতাংশ উত্তরদাতা ‘টাকা’ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০২৫ সালের ৬ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপী এই জরিপ পরিচালনা করে। ৬৪ জেলার এক হাজার ৯২০টি প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট থেকে ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী মোট ৮৪ হাজার ৮০৭ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
জরিপে নাগরিকদের অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুর্নীতি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার ও বৈষম্য—এসডিজি ১৬-এর ছয়টি সূচকের অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, দেশের ৮৪.৮১ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ এলাকার আশপাশে একা চলাফেরা করতে নিরাপদবোধ করেন। তবে এ হার নারীদের মধ্যে (৮০.৬৭ শতাংশ) পুরুষদের (৮৯.৫৩ শতাংশ) তুলনায় কম।
সুশাসনের বিষয়ে মাত্র ২৭.২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন যে তারা সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলতে পারেন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে প্রভাবের ক্ষেত্রে এ হার আরও কমে ২১.৯৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। প্রায় এক-চতুর্থাংশ নাগরিক মনে করেন, দেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সাড়াপ্রবণ।
গত এক বছরে ৪৭.১২ শতাংশ মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন এবং ৪০.৯৩ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের সন্তান সরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে। সরকারি সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় সন্তুষ্টির হার ৭২.৬৯ শতাংশ, প্রাথমিক শিক্ষায় ৮১.৫৬ শতাংশ এবং অন্যান্য সরকারি সেবায় ৬৬.৯১ শতাংশ।
জরিপে আরও দেখা যায়, দেশের ১৯.৩১ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। বৈষম্যের প্রধান ভিত্তি ছিল আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও লিঙ্গ। তবে বৈষম্যের ঘটনায় মাত্র ৫.৩৭ শতাংশ ভুক্তভোগী কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানিয়েছেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে