শেখ হাসিনা ও সাবেক সিইসিসহ অন্য কমিশনারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিএনপির
বিগত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে শেখ হাসিনা, সাবেক সিইসিসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার এবং সচিবসহ মোট ১৯ জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এছাড়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করা হবে বলে জানিয়েছে দলটি।
রোববার (২২ জুন) বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত আবেদনের কপি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এম নাসির উদ্দিনের কাছে জমা জমা দেয় দলটির একটি প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান। তার সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যে মিজানুর রহমান, ইকবাল হোসেন, শরিফুল ইসলাম ও নাঈম হাসান।
সিইসির সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন খান বলেন, বিতর্কিত এই তিন নির্বাচনকে ঘিরে বারবার অভিযোগ করার পরও তৎকালীন সিইসি ও সংশ্লিষ্টরা কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা আশা করি বর্তমান নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। আমরা বিএনপির মহাসচিবের এ সংক্রান্ত চিঠি জমা দিয়েছি। যেহেতু নির্বাচন ভবন আগারগাঁও এলাকায়, সেজন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা তাদের কাছে অভিযোগ জমা দিলাম। আমরা জানি বর্তমান কমিশন এ অভিযোগের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। তারা (আগের কমিশন) যেহেতু সংবিধান লঙ্ঘন করে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন, এজন্যে তাদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা থানায় এজহার করা হবে।
তিনি জানান, তিন সিইসি, নির্বাচন কমিশনার, সচিবসহ এ মামলায় শেখ হাসিনাকেও রাখা হয়েছে। এখন অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কী আশ্বাস দিয়েছেন, তা জানতে চাইলে সালাহ উদ্দিন বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমাদের বলেছেন-এখন কপি রিসিভ করেছেন, যা পারেন আইনি ব্যবস্থা নেবেন। সিইসি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, তারা নিরপেক্ষ। আমরা আপনাদেরও নয়, কারো পক্ষে নয়। আমরা নিরপেক্ষ, যে আইনি ব্যবস্থা সেটাই নেয়া হবে।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ আমলে হওয়া ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সিইসি, ইসি ও সচিবদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এরমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে মামলার পদক্ষেপ এলো।
প্রসঙ্গত, প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি এই সংসদকে ‘বিনা ভোটের সংসদ’ হিসেবে অভিহিত করে।
এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে। অধিকাংশ ভোট আগের রাতে হয়ে যাওয়ার অভিযোগের মধ্যে বিরোধী দলগুলো মাত্র সাতটি আসনে জয়লাভ করে। এই নির্বাচন পরবর্তীতে ‘নিশিরাতের নির্বাচন’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মধ্যে আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে শরিক ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির জন্য কিছু আসন ছেড়ে দেয়। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। এই নির্বাচন ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচন হিসেবে পরিচিতি পায়।
কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ওই নির্বাচন কমিশনের চার নির্বাচন কমিশনার ছিলেন- সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবু হাফিজ, সাবেক যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আব্দুল মোবারক, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাবেদ আলী এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা দায়রা জজ মো. শাহনেওয়াজ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে