‘গান নয়, ভিক্ষা করো’ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সেই পরিবারকে হুমকি, আতঙ্কে বন্ধ জীবিকা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজঘর গ্রামের হেলাল মিয়ার পরিবার প্রজন্ম ধরে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। পরিবারটির ১৩ সদস্যের মধ্যে নয়জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তবু তারা কখনো ভিক্ষা করেননি—গানই ছিল তাদের সম্মানের সঙ্গে বাঁচার একমাত্র ভরসা।
কিন্তু সম্প্রতি অজ্ঞাত কিছু লোক এসে সেই পথও বন্ধ করে দিতে চাইল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর মুক্তমঞ্চে প্রায় ৫০ বছর ধরে গান গেয়ে সংসার চালানো এই পরিবারটিকে বলা হলো—গান নয়, ভিক্ষা করে চলতে হবে।
হেলাল মিয়া জানান, বুধবার প্রতিদিনের মতো গান করছিলেন তারা। তখন কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তি এসে গান গাইতে নিষেধ করে যায়। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যে দলই ক্ষমতায় আসুক, এখানে গান গাইতে দেওয়া হবে না।’ এমনকি বাউল শিল্পী আবুল সরকারের নাম টেনে এনে তাদের ভিক্ষাবৃত্তি করতে বলা হয়।
তিনি বলেন, ‘কারা বাধা দিয়েছে, আমরা চিনতে পারিনি। ভয় পেয়ে তখন থেকেই গান গাওয়া বন্ধ করেছি। ৫০ বছর ধরে এমন ঘটনা হয়নি।’
হেলাল মিয়া, তার চার ছেলে ও এক মেয়ে—কেউই দেখতে পান না। কিন্তু গানই ছিল তাদের শক্তি, তাদের মর্যাদা। লাল-নীল আলোয় সাজানো মুক্তমঞ্চে প্রতিদিন গান শুনে মানুষ যে টাকা দিত, তা দিয়েই চলত ১৫ জনের সংসার। সাধারণ দিনে এক থেকে দেড় হাজার, আর বিশেষ দিনে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হতো।
তাদের গল্প অনেকবার ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। ছোটবেলা থেকে সংগীতশিল্পী শাহনূর শাহের কাছে তালিম নেওয়া হেলাল মিয়া দশ-বারো বছর বয়স থেকেই হাটে-বাজারে গান গেয়ে বেড়িয়েছেন। পরবর্তীতে সন্তানদেরও গান শিখিয়েছেন, কারণ গানই ছিল তাদের জীবনের আলো।
হেলাল মিয়ার কণ্ঠে এখন আতঙ্ক— ‘এখন তো কোনো জায়গাতেই নিরাপদ মনে হচ্ছে না। গান গাইতে না পারলে সংসার চলবে কীভাবে?’
এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌরসভার সাবেক মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি জানান, তিনি পরিবারটিকে আগে থেকেই সহযোগিতা করে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘কিছু উশৃঙ্খল ছেলে নাকি বাধা দিয়েছে। আমি তাদের (দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পরিবারকে) আবার গানে বসতে বলেছি।’
গানের ওপর ভর করে বেঁচে থাকা একটি পরিবারের জীবিকা আজ হুমকির মুখে। তাদের একটাই আশা—আবারও মুক্তমঞ্চে সুর তুলতে পারার স্বাধীনতা, যাতে তাদের অন্ধকার জীবনে অন্তত জীবিকার আলোর রেখাটি ফিরে আসে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে