ট্রাইব্যুনালে তাজুল ইসলামের আচরণ নিয়ে বার্গম্যানের উদ্বেগ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর গতকালকের (২৩ নভেম্বর) একটি শুরুর সেশনে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের আচরণ নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক ও গবেষক ডেভিড বার্গম্যান। উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি কিছু পয়েন্ট তুলে ধরেছেন এবং বলেছেন এগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।
সাবেক মেজর জিয়াউল আহসানের আইনজীবী নাজনীন নাহারের অভিযোগ রয়েছে, জোরপূর্বক নিখোঁজ সম্পর্কিত অনুসন্ধান কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস জিয়াউলকে হুমকি দিয়েছিলেন, ‘আপনি যদি উত্তর না দেন, আপনার মেয়ে অনাথ হয়ে যাবে।’ বার্গম্যান মনে করেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ, এবং ট্রাইব্যুনালের উচিত এই জিজ্ঞাসাবাদ ভিডিওর কপি দেখতে চাওয়া, যাতে সত্যি-সত্যি এই ঘটনা ঘটেছে কি না তা নির্ধারণ করা যায়।
তাজুল ইসলাম একই আইনজীবীর কাছে শুনানিতে বলেছেন, ‘আপনি চুপ থাকুন। কথা বলবেন না। আপনিও অভিযুক্ত হতে পারেন। আমাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে।’ বার্গম্যান মনে করেন, এটি আদালতে অগ্রহণযোগ্য হুমকি। ২০১৩ সালে আইসিটি প্রসিকিউটররা জামায়াতে ইসলামী’র আইনজীবী আব্দুর রজ্জাককে হুমকি দিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছিলেন—এটি তার সাথে মিল রয়েছে।
তাজুল ইসলাম দাবি করেছেন- জিয়াউল আহসান প্রায় ১,০০০ জন মানুষ হত্যা ও তাদের পেট ফাঁড়ার পর বুরিগঙ্গায় দাফন করার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বার্গম্যান মনে করেন, এই দাবি প্রমাণের ভিত্তিতে নয় এবং আদালতে এটি পক্ষপাতদুষ্ট মন্তব্য।
যদিও ট্রাইব্যুনালের চেয়ারজাস্টিস মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার অনেকবার হস্তক্ষেপ করেছেন। বার্গম্যানের মতে তিনি তাজুল ইসলামের এই ধরনের মন্তব্য থামাতে যথেষ্ট কড়া হননি।
এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিয়ম অনুযায়ী, আইনজীবীকে সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নেওয়া যায় না; কেবল পাশের কক্ষে বসে দেখতে পারেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথা অনুযায়ী, জিজ্ঞাসাবাদের সময় প্রতিরক্ষামূলক আইনজীবী উপস্থিত থাকতে পারেন না, কেবল পাশে থাকা কক্ষে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। ট্রাইব্যুনাল সেশনের সময়, সাবেক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের পক্ষের আইনজীবী নাজনীন নাহার অভিযোগ তুলেছিলেন, তাকে নিরাপদ বাসভবনে তার ক্লায়েন্টের জিজ্ঞাসাবাদে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে, যদিও আইন অনুযায়ী আইনজীবী উপস্থিত থাকতে পারতেন। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, এই জিজ্ঞাসাবাদ অবৈধভাবে ভিডিওর মাধ্যমে রেকর্ড করা হয়েছে এবং তাকে কেবল দুপুরের বিরতির সময় উপস্থিত থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নাজনীন আরও দাবি করেছেন, জোরপূর্বক নিখোঁজ সম্পর্কিত অনুসন্ধান কমিশনের নাবিলা ইদ্রিস আইসিটি নিয়মাবলীর লঙ্ঘন করে জিয়াউলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এবং হুমকি দিয়েছেন, ‘আপনি যদি উত্তর না দেন, আপনার মেয়ে অনাথ হয়ে যাবে।’
উপরোক্ত অভিযোগের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সব অভিযোগকে ‘স্পষ্ট মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি নাজনীনকে সতর্কও করেছেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগও হতে পারে, এবং বলেছেন: ‘আপনি চুপ থাকুন। কথা বলবেন না। আপনিও অভিযুক্ত হতে পারেন। আমাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে।’
ট্রাইব্যুনাল চেয়ার জাস্টিস মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার কয়েকবার হস্তক্ষেপ করে তাজুলকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এবং উল্লেখ করেছেন, নাজনীন একজন আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত আছেন। ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে কার্যক্রম চলতে পারবে।
নাজনীন জিয়াউলের বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের স্বাক্ষর এবং তার দুইটি ফোন নম্বরের কল ও এসএমএস লগ পেতে চেয়েছিলেন। ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দিয়েছেন, এই ধরনের তথ্য শুধুমাত্র অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে দায়ে স্থির হওয়ার পর প্রকাশ করা যাবে, যাতে চলমান তদন্তে বিঘ্ন না ঘটে।
এই ঘটনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কোর্টরুমের আচরণ, প্রতিরক্ষামূলক আইনজীবীর ভূমিকা এবং জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ উত্থাপন করছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে