Views Bangladesh Logo

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে ৫ দেশের নাগরিক জড়িত: সিআইডি

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘটা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় পাঁচ দেশের নাগরিকের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সিআইডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জানিয়েছেন, এই অপরাধে জড়িত বিদেশী নাগরিকরা শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু শীর্ষ কর্মকর্তাও এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

সিআইডি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইউএনবি জানায়, সেসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাক করার জন্য একটি অত্যাধুনিক ম্যালওয়্যার ব্যবহার করা হয়।

ম্যালওয়্যার-সংযুক্ত ফাইলটি আইসিটি বিভাগ থেকে জেনেশুনে খোলা হয়েছিল, যার ফলে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার অবৈধভাবে স্থানান্তরিত করা সম্ভব হয়েছিল।

সিআইডি কর্মকর্তা আরও বলেন, আদালতে চার্জশিট দাখিলের মাধ্যমে চলমান তদন্ত শীঘ্রই শেষ হবে।

চার্জশিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) বিস্তারিত প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যাতে বিদেশি নাগরিকদের সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে। ওই প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠাতে এরই মধ্যে এফবিআইকে অনুরোধ করা হয়েছে। সেটি হাতে পেলেই তদন্ত শেষ করে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে, কর্মকর্তা বলেন।

তদন্ত সংস্থা এফবিআইকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছে, তিনি আরও বলেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি ছিল ইতিহাসের বৃহত্তম সাইবার ডাকাতির মধ্যে একটি।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) রাতে সংঘটিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি বিশ্বের অন্যতম বড় সাইবার ডাকাতির ঘটনা। সে সময় বাংলাদেশে ব্যাংক কার্যক্রম বন্ধ ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রেও সাপ্তাহিক ছুটি শুরু হয়েছিল। সেই সুযোগে হ্যাকাররা নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার স্থানান্তরের চেষ্টা করে, তবে ১০১ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার সরাতে পারে তারা।

চুরি হওয়া ওই অর্থের বড় অংশ দুর্বল নজরদারির ফাঁক গলে ফিলিপাইনের ক্যাসিনো শিল্পের গোপনীয়তা আইনের অধীনে পাচার হয়ে যায়। এর মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনে এবং প্রায় ২ কোটি ডলার শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয়।

পরে শ্রীলঙ্কায় প্রেরিত অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হলেও ফিলিপাইন থেকে অর্থ উদ্ধার জটিল হয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে সরকার।
এ ঘটনার তদন্তে সিআইডির পাশাপাশি এফবিআই, ফিলিপাইনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এনবিআই) এবং শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক অংশ নেয়। পরবর্তীতে জাতিসংঘকেও এ অপরাধে ব্যবহৃত কৌশল ও লেনদেনের ধারা সম্পর্কে জানানো হয়।

ঘটনার ৩৯ দিন পর ওই বছরের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব ও বাজেট বিভাগের তৎকালীন উপপরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মতিঝিল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন। পরে মামলাটি সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়।

প্রায় নয় বছরের তদন্তে দেশি-বিদেশি শতাধিক সাক্ষীর জবানবন্দি, আইপি ঠিকানা, নেটওয়ার্ক লগ, ব্যাংক লেনদেনের তথ্য এবং ড্রিডেক্স ম্যালওয়্যার কোডসহ বিস্তৃত প্রযুক্তিগত প্রমাণ খতিয়ে দেখা হয়েছে। এর ফলে হামলার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।

সিআইডির আরেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, এই তদন্তে আন্তর্জাতিক আর্থিক অপরাধ চক্রের কৌশল, তাদের দেশীয় সহযোগীদের ভূমিকা এবং আমাদের সাইবার নিরাপত্তার দুর্বলতার মতো বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চার্জশিট এমনভাবে প্রস্তুত করতে চাই যাতে অপরাধীরা শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আইনের মুখোমুখি হয়। ’

চার্জশিট দাখিলের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম আলোচিত এ সাইবার ডাকাতির রহস্য উন্মোচিত হবে এবং বাংলাদেশ আর্থিক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আশা করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ