পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে ১২ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য অবিলম্বে ১২টি আন্তর্জাতিক আইন ও সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে দেশের সকল বাণিজ্যিক ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)।
শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য এবং বেশ কয়েকটি বড় শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠার পরিপ্রেক্ষিতে এই সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে ৩২টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই নির্দেশনা দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওমর ফারুক খান।
ওমর ফারুক খান বলেন, ‘বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরাতে আন্তর্জাতিক আইন ও সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক নেতৃত্ব দেবে এবং অন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কনসোর্টিয়াম গঠন করে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করবে। চুক্তি চূড়ান্ত হলে উদ্ধার হওয়া অর্থ কীভাবে দেশে ফিরিয়ে এনে জমা দেয়া হবে তা মূল্যায়ন করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, অর্থ পাচারের সন্দেহে ইতোমধ্যে ১১টি শিল্পগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), যার মধ্যে বসুন্ধরা, নাসা এবং এস আলম গ্রুপের নাম রয়েছে।
ফারুক খান বলেন, ‘আমরা নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টের (এনডিএ) আওতায় এসব সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করব। কিছু প্রাথমিক আলোচনা শুরুও হয়েছে।"
এই উদ্যোগকে সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের একটি ব্যাপক প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেন এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান, যেখানে একাধিক প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকবে।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, অর্থ পাচার প্রতিরোধের প্রেক্ষাপটে ১২টি আন্তর্জাতিক সংস্থার নাম দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং এনডিএ-এর অধীনে বিদেশে থাকা সম্পদ পুনরুদ্ধারে তাদেরকে নিযুক্ত করার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে।
শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সুবিধাভোগী বলে অভিযোগ ওঠা অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকায় নাম রয়েছে: সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর আরামিট গ্রুপ, এস. আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, সিকদার গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, ওরিয়ন, জেমকন, নাবিল এবং সামিট গ্রুপসহ আরও অনেকে।
এদিকে অবৈধ আর্থিক প্রবাহ মোকাবেলার সক্ষমতা বাড়াতে সম্প্রতি 'অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিভাগ' নামে একটি নতুন বিশেষায়িত সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপ এমন সময় আসল যখন চারটি বৈশ্বিক সংস্থা—স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি ইনিশিয়েটিভ, ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন কোঅর্ডিনেশন সেন্টার, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাসেট রিকভারি ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং তহবিল সংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়া তারা শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত পাচার হওয়া ৪০,০০০ কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশের তদন্তকারী সংস্থাগুলো।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে