বাংলাদেশ কখনো স্বৈরশাসনের পথে ফিরবে না: ইউনূস

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ আর কখনো স্বৈরশাসনের পথে ফিরবে না এবং দেশের গণতন্ত্র কখনো হুমকির মুখে পড়বে না। তিনি উল্লেখ করেছেন, দলমত নির্বিশেষে গঠিত জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশের গণতন্ত্র ও সংস্কার কার্যক্রম টেকসইভাবে এগিয়ে যাবে। জনগণের আত্মত্যাগে অর্জিত ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠনের প্রক্রিয়াকে কোনো শক্তি বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।

শুক্রবার রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে তিনি এই বক্তব্য রাখেন। অধিবেশনটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় শুরু হয় এবং সাড়ে ১১টায় প্রধান উপদেষ্টা ভাষণ দেয়া শুরু করেন। তিনি দিনের দশম বক্তা হিসেবে ভাষণ দেন।

ড. ইউনূস বলেন, ১৯৭১ সালে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ জন্ম নিয়েছিল। তবে যে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ আত্মত্যাগ করেছিল তা গত পাঁচ দশকে বারবার বাধার মুখে পড়েছে। জনগণকে বারবার সেই অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।

তিনি স্মরণ করান, চলতি বছর পালিত হয়েছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর প্রথমবার্ষিকী, যেখানে তরুণ সমাজ স্বৈরাচারকে পরাভূত করেছিল। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেই অভ্যুত্থান বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়ভিচারভিত্তিক সমাজ গঠনের নতুন পথ খুলে দিয়েছে এবং সেই দায়িত্ব জনগণ আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে।

রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জের প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, নির্বাহী আদেশে সংস্কার করা সম্ভব হলেও সরকার কঠিন পথ বেছে নিয়েছে—অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই প্রক্রিয়া। এজন্য বিচার বিভাগ, শাসনব্যবস্থা, নির্বাচন, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, দুর্নীতি দমন ও নারী অধিকারসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে ১১টি স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়।

তিনি জানান, এই কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করার জন্য ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল ও জোটকে নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এর ফলশ্রুতিতে গত জুলাই মাসে সব দল একসঙ্গে ‘জুলাই ঘোষণা’ প্রকাশ করে এবং সংস্কার কার্যক্রমে সময়মতো অঙ্গীকার করে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই অঙ্গীকারের ফলে আগামী নির্বাচনে যে কোনো দলই জনগণের সমর্থন পাক না কেন, সংস্কার বাস্তবায়নে কোনো অনিশ্চয়তা থাকবে না। বাংলাদেশের গণতন্ত্র আর কখনো হুমকির মুখে পড়বে না।