আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ
ব্যাটিং ব্যর্থতায় আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করল স্বাগতিক বাংলাদেশ। আজ সিরিজের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের কাছে ৩৯ রানে হারে টাইগাররা। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি তৃতীয় জয় আইরিশদের। এই হারে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ল লিটন দাসের দল।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে আয়ারল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতে ২৬ বলে ৪০ রান তুলে প্রথমে ব্যাট করার সুযোগটা ভালোভাবে কাজে লাগায় আয়ারল্যান্ড।
এরমধ্যে বাংলাদেশের বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলামের ওভারে ৪ বাউন্ডারিতে ১৮ রান তোলেন আয়ারল্যান্ড ওপেনার টিম টেক্টর।
পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে সাইফ হাসানের ক্যাচে আয়ারল্যান্ডের আরেক ওপেনার ও অধিনায়ক পল স্টার্লিংকে শিকার করে বাংলাদেশকে প্রথম উইকেটের স্বাদ দেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। ৪টি চারে ১৮ বলে ২১ রান করেন স্টার্লিং।
অধিনায়ক ফেরার পর ক্রিজে জুটি বাঁধেন দুই ভাই টিম টেক্টর ও হ্যারি টেক্টর। দু’জনে ২৪ বলে ৩১ রান উপহার দেন দলকে। মারমুখী মেজাজে থাকা টিম টেক্টরকে নবম ওভারে বিদায় দেন বাংলাদেশের লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। লং-অনে তানজিদ হাসানকে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১৯ বল খেলে ৬টি চারে নিজের ৩২ রানের ইনিংসটি সাজান টিম টেক্টর।
ছোট ভাই টিম টেক্টর ফেরার পর নতুন ব্যাটার ও উইকেটরক্ষক লরকান টাকারকে নিয়ে ২৫ বলে ৩৪ রানের জুটিতে আয়ারল্যান্ডের স্কোর ১২তম ওভারে ১শতে নেন হ্যারি টেক্টর। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় শুরুর পর শরিফুলের প্রথম শিকারে বিদায় ঘণ্ট বাজে টাকারের। ১৪ বলে ১৮ রান করেন তিনি।
দলীয় ১০৫ রানে তৃতীয় উইকেট পতনের পর আয়ারল্যান্ডকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন হ্যারি টেক্টর ও কার্টিস ক্যাম্ফার। চতুর্থ উইকেটে ২৯ বলে ৪৪ রান যোগ করেন তারা। এতে ১৭ ওভার শেষে ১৪৮ রান পেয়ে যায় আয়ারল্যান্ড।
তানজিমের করা ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে পারভেজ হোসেন ইমনের দারুণ ক্যাচে বিদায় নেন ক্যাম্ফার। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ১৭ বলে ২৪ রান করেন তিনি।
এরপর ইনিংসের শেষ ১৬ বলে ৩২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আয়ারল্যান্ডকে ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৮১ রানের সংগ্রহ এনে দেন হ্যারি টেক্টর ও জিওর্জি ডকরেল।
তানজিমের করা ইনিংসের শেষ ওভারে হ্যারি টেক্টরের দুই ছক্কায় ১৭ রান পায় আইরিশরা। বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান আয়ারল্যান্ডের।
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসে অপরাজিত ৬৯ রান করেন টেক্টর। ৪৫ বল খেলে ১টি চার ও ৫টি ছক্কা মারেন তিনি। ২ চারে ৭ বলে ১২ রান করেন ডকরেল।
তানজিম ৪১ রানে ২টি, শরিফুল ও রিশাদ ১টি করে উইকেট নেন।
১৮২ রান তাড়া করতে নেমে দলীয় ৫ রানে ৩ এবং ১৮ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তানজিদ হাসান ২, পারভেজ হোসেন ইমন-অধিনায়ক লিটন দাস ১ রান করে এবং সাইফ হাসান ৬ রানে আউট হন। এসময় মার্ক অ্যাডায়ার ২টি, ব্যারি ম্যাকার্থি ও ম্যাথিউ হামফ্রিজ ১টি করে উইকেট নেন।
পঞ্চম উইকেটে ৩৪ বলে ৪৮ রানের জুটিতে দলকে চাপমুক্ত করার চেষ্টা করেন তাওহিদ হৃদয় ও জাকের আলি। দলীয় ৬৬ রানে জাকেরকে শিকার করে জুটি ভাঙেন ম্যাকার্থি। ১ ছক্কায় ১৬ বলে ২০ রান করেন জাকের।
১৩তম ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে হারের মুখে ছিটকে দেন স্পিনার হামফ্রিজ। তানজিমকে ৫, রিশাদ ও নাসুমকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেন তিনি। এতে ৭৪ রানে অষ্টম উইকেট পতনে দ্রুত গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ।
কিন্তু সেটি হতে দেননি হৃদয় ও শরিফুল ইসলাম। নবম উইকেটে ৩১ বলে ৪৮ রান যোগ করে বাংলাদেশকে বড় হারের লজ্জা থেকে রক্ষা করেন তারা। এই জুটিতেই ৩৪ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন হৃদয়।
শরিফুল ১২ রান করে ফিরলেও, ইনিংসের শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন হৃদয়। তার লড়াকু ইনিংসের সুবাদে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪২ রান করে বাংলাদেশ।
৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫০ বলে ক্যারিয়ার সেরা অনবদ্য ৮৩ রান করেন হৃদয়। বল হাতে আয়ারল্যান্ডের হামফ্রিজ ১৩ রানে ৪ এবং ম্যাকার্থি ২৩ রানে ৩ উইকেট নেন।
একই ভেন্যুতে আগামী ২৯ নভেম্বর সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
আয়ারল্যান্ড : ১৮১/৪, ২০ ওভার (হ্যারি টেক্টর ৬৯*, টিম টেক্টর ৩২, তানজিম ২/৪১)।
বাংলাদেশ : ১৪২/৯, ২০ ওভার (হৃদয় ৮৩*, জাকের ২০, হামফ্রিজ ৪/১৩)।
ফল : আয়ারল্যান্ড ৩৯ রানে জয়ী।
সিরিজ : তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে আয়ারল্যান্ড।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে