রাখাইন করিডোরের সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে: মেজর হাফিজ
বিএনপির সিনিয়র নেতা মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য ‘মানবিক করিডোর’ অনুমোদন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ তার জনগণের সম্মতি ছাড়াই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।
তিনি বলেন, ‘মানবিক করিডোরের রূপে আমাদের সামনে একটি নতুন বিপদের আবির্ভাব ঘটেছে। আমরা কি জনগণের সম্মতি ছাড়াই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ব?’
শনিবার (৩ মে) রাজধানীর এনএসসি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক সমিতির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ বলেন, করিডোর ইস্যুতে দেশের জনগণ খুবই উদ্বিগ্ন। আমরাও উদ্বিগ্ন। বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। আমরা জানি না আমাদের দেশ কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
মেজর হাফিজ বলেন, তাদের দল একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া আর কিছুই চায় না, যেখানে জনগণ তাদের পছন্দের দলকে ভোট দিতে পারবে। জনগণ যেকোনো দলকে ক্ষমতায় আনতে পারে এবং এতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।
তিনি বলেন, দেশের জনগণকে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ না দিলে রাজনীতি ও গণতন্ত্র বিকশিত হবে না।
হাফিজ বলেন, বিএনপি, অন্যান্য গণতান্ত্রিক দলগুলোর সাথে মিলে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য ১৭ বছর ধরে আন্দোলন করেছে; কিন্তু আমরা এমন নির্বাচনের কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। জ্ঞানী ব্যক্তিরা বলছেন যে, আগামী দুই, তিন বা পাঁচ বছরেও নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ বর্তমান সরকার চায় না এটি অনুষ্ঠিত হোক।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকার যাই বলুক না কেন, তাদের মনোভাব, অঙ্গভঙ্গি এবং এর উপদেষ্টাদের বক্তব্য তাদের দলকে এমন ধারণা দিয়েছে যে, বর্তমান প্রশাসন গণতন্ত্রকে পুরোপুরি বিকশিত হতে দেবে না।
ড, ইউনূসকে বিশ্বব্যাপী একজন খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার দল প্রশাসনকে সমর্থন করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু কয়েক হাজার শহীদের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশে অবিলম্বে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা উচিত। তবুও আমরা বুঝতে পারছি না তারা (সরকার) কী পরিকল্পনা করছে এবং কী নিয়ে ভাবছে।
হাফিজ জানান, তিনি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ১০ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করেছিলেন, যেখানে ড. ইউনূস তাদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে প্রধান উপদেষ্টা পরে তার অবস্থান পরিবর্তন করে বলেন যে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘এইভাবে, তারা (সরকার) রাষ্ট্রের ভাগ্য নিয়ে খেলা করছে।’
বাংলাদেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতিবাচক প্রভাবের সমালোচনা করে মেজর হাফিজ বলেন, দলটি ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া মূল্যবোধকে ধ্বংস করেছে এবং প্রকৃত ক্রীড়াবিদদের মতো মনোভাবের অভাব রয়েছে।
রাজনীতি এবং ক্রীড়ার মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য বজায় রাখার উপর জোর দিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, নিবেদিতপ্রাণ ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রাজনীতিবিদদের থেকে আলাদা মানসিকতা এবং প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের খেলাধুলাকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে দূরে রাখা উচিত, যাতে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার জন্য খেলোয়াড়রা হয়রানি বা মানহানি না পান।’
মেজর হাফিজ বলেন, গত নির্বাচনের আগে যখন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের সঙ্গে দেখা করেছিলাম, তখন তাকে আওয়ামী লীগে যোগ না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। সাকিব এখন বিপদে পড়েছেন, কারণ তিনি পরামর্শ গ্রহণ করেননি।
ফেব্রুয়ারিতে অবসর ঘোষণা করা প্রাক্তন ক্রিকেটার তামিম ইকবালও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তার বক্তৃতার সময় তামিমকে রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন হাফিজ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে