আইসিটি অগ্রগতি সূচকে বাংলাদেশ মিয়ানমার-ভুটান-শ্রীলঙ্কার চেয়ে পিছিয়ে আছে
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের বৈশ্বিক অগ্রগতির সূচকে প্রতিবেশী ও সমমানের অর্থনীতির অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) প্রকাশিত আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স (আইডিআই) ২০২৫-এ এ চিত্র উঠে এসেছে। গত জুনে প্রকাশিত সূচকটিতে বিশ্বের ১৬৪ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবার অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়েছে, যা ২০২৩ সালের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বৈশ্বিক গড় স্কোর ৭৮ এবং নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় স্কোর ৬৬ হলেও বাংলাদেশ পেয়েছে ৬৪ দশমিক ৯। যা কেবল এই শ্রেণির দেশগুলোর গড়ের নিচে নয়, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গড়েরও চেয়ে কম। যদিও গত কয়েক বছরে ধীরে ধীরে উন্নতি হয়েছে—২০২৩ সালে স্কোর ছিল ৬১ দশমিক ১, ২০২৪ সালে ৬২ এবং এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ দশমিক ৯।
প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মালদ্বীপ ও ভিয়েতনাম বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। মিয়ানমারের স্কোর ৬৯ দশমিক ৭, শ্রীলঙ্কার ৭১ দশমিক ৪, মালদ্বীপের ৮১ দশমিক ৭, ভুটানের ৮৫ দশমিক ৭ এবং ভিয়েতনামের ৮৬। তবে পাকিস্তানের ৫৬ দশমিক ৪ স্কোরের তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে। ভারতের তথ্য সূচকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
আইডিআই সূচকে মূলত দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে—সর্বজনীন সংযোগ ও অর্থবহ সংযোগ। সর্বজনীন সংযোগে ব্যক্তি, পরিবার, কমিউনিটি ও ব্যবসার মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ বোঝানো হয়েছে। এ খাতে বাংলাদেশের স্কোর মাত্র ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ। ব্যক্তিগত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং পরিবারপ্রতি ইন্টারনেট ব্যবহারের হার ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ, যা নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড়ের নিচে। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, বর্তমানে দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং পরিবারপ্রতি ব্যবহারের হার ৫৯ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে পিপিআরসির গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের ৬৪ শতাংশ পরিবারে কোনো না কোনোভাবে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে অর্থবহ সংযোগে বাংলাদেশের স্কোর ৮৫ দশমিক ১। এই সূচকে মোবাইল নেটওয়ার্ক কাভারেজ ও ইন্টারনেট ট্রাফিক সাবস্ক্রিপশনসহ কিছু ক্ষেত্রে ভালো করেছে বাংলাদেশ। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে মোবাইল ফোন মালিকানার হার আইটিইউর হিসাবে ৬৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং বিবিএসের হিসাবে ৬৪ দশমিক ৮ শতাংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি এম মইনুল বলেন, সমমানের অর্থনীতির দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ অনেক খাতে পিছিয়ে থাকলেও ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রসার ইতিবাচক দিক। তার মতে, এখন শুধু সেবা গ্রহণ নয়, বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন সেবা সৃষ্টি ও সমস্যা সমাধানের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। বিদ্যমান অবকাঠামোকে কাজে লাগিয়ে তরুণদের দক্ষতা বাড়ানো গেলে সফটওয়্যার উন্নয়ন ও বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজার ধরার সম্ভাবনা রয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে