Views Bangladesh Logo

মানবাধিকার সংকটের মুখোমুখি বাংলাদেশ: হিউম্যান রাইটস

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

০২৫ সালের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে ‘গভীর হতাশাজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। চলমান গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে গুরুতর উদ্বেগও প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

চলতি বছরের প্রথম ছয়মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাজনৈতিক সহিংসতাজনিত মৃত্যু, জনতার মারধর, নির্যাতন ও হত্যা, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন এবং সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের ঘটনা বেড়েছে’

সোমবার (৭ জুলাই) প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পূর্ববর্তী বছরগুলোতে হওয়া নির্যাতনের ধারাবাহিকতা, এমনকি বৃদ্ধিও তুলে ধরেছে।

এইচআরএসএসের নির্বাহী পরিচালক এজাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে মানবাধিকার গ্রুপটি উল্লেখ করেছে, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও বাংলাদেশ এখনও সমতা, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। জনগণ স্বাধীনতার প্রকৃত সুবিধা পায়নি’।

প্রতিবেদনে ২০২৪ সালকে দেশের মানবাধিকারের জন্য সবচেয়ে উদ্বেগজনক বছরগুলোর মধ্যে একটি বলে অভিহিত করা হয়েছে। এ বছর গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে এবং নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার আগস্টে ক্ষমতা গ্রহণ করে।

তবে, এইচআরএসএস জানিয়েছে, অর্থবহ পরিবর্তনে জনগণের আশা মূলত অপূর্ণ রয়ে গেছে এবং অন্তর্বর্তী সরকার এখনও পর্যন্ত প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে মৃত্যু, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, মাজারে আক্রমণ ও ভাংচুর, কারাগারে মৃত্যু, জনসমাবেশে বাধা এবং প্রতিবাদী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনাও ঘটেছে’।

‘এই সময়ের মধ্যে চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি এবং হত্যার ঘটনাও ঘটেছে, যা জনসাধারণের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে’।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার ভাষণ সম্প্রচারের ঘোষণার পর শিক্ষার্থী ও নাগরিকরা ৫, ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। যার মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবন, শেখ হাসিনার সুধা সদন বাসভবন এবং সারা দেশে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকটি অফিস ও নেতাদের বাসভবন’।

‘জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারের খালাসের রায় ঘোষণার পর বামপন্থী ছাত্রজোট ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্ট ফ্রন্ট এবং শাহবাগবিরোধী জোটের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘর্ষ শুরু হয়। ১২ মে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেয়া বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ, এর সহযোগী, মিত্র এবং সমমনা সংগঠনগুলোর সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেন’।

প্রতিবেদনটি বলছে, ‘বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ ও উত্তেজনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। রাজধানীতে বিভিন্ন দাবিতে সড়ক অবরোধে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। আদালত ও কারাগারের বাইরে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর হামলার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সহযোগীরা পুলিশ স্টেশন এবং আইন প্রয়োগকারী কর্মীদের ওপর আক্রমণ করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জোরপূর্বক মুক্তি দিয়েছে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি এবং সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনার লক্ষ্যে বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ সহ যৌথ বাহিনীর অভিযানেও অনিয়মের অভিযোগ উঠে এসেছে’।

‘তাছাড়া, ভারত সীমান্তে সংঘর্ষ ও উত্তেজনায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে, যেখানে বিএসএফ বেড়া নির্মাণ, সহিংসতা উস্কে, বাংলাভাষী মানুষকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া, এমনকি নিরীহ বাংলাদেশিদের হত্যা, আহত বা গ্রেপ্তার করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। মিয়ানমার থেকে আরাকান সেনাবাহিনীর সাথে জড়িত ঘটনাগুলো, যার মধ্যে একটি বাংলাদেশি জাহাজ আটক, সীমান্তে গুলি চালানো এবং মাইন ও মর্টারশেলের বিস্ফোরণও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে’।

এইচআরএসএস উপসংহারে পৌঁছেছে, ‘একটি ভালো বছরের আশা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ রয়ে গেছে। নতুন উদ্বেগ দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলছে’।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ