নির্বাচন পর্যন্ত উসকানিমূলক কন্টেন্টে মেটার বাড়তি নজরদারি চায় বাংলাদেশ
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক কনটেন্টের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে মেটাকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। শুক্রবার জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি (এনসিএসএ) এই চিঠি পাঠায়। এতে বলা হয়েছে, ফেসবুকসহ মেটার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সহিংসতা উসকে দিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চলছে। এ কারণে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভোট সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ–সংক্রান্ত কনটেন্টে বাড়তি নজরদারি বজায় রাখতে মেটাকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
চিঠিটি পাঠানো হয়েছে মেটার ভাইস প্রেসিডেন্ট (পাবলিক পলিসি) সাইমন মিলনার, পরিচালক (পাবলিক পলিসি, আঞ্চলিক কার্যালয়) সারিম আজিজ এবং হেড অব হিউম্যান রাইটস পলিসি ফ্রেডেরিক রসকি–কে।
এনসিএসএ জানিয়েছে, বাংলাদেশে মেটার কোনো স্থানীয় কার্যালয় না থাকায় জরুরি নিয়ন্ত্রক ও নিরাপত্তা–সংক্রান্ত যোগাযোগ সাধারণত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং এনসিএসএর মাধ্যমে করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, গণতান্ত্রিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাওয়া বাংলাদেশে মেটার প্ল্যাটফর্মগুলোকে সহিংসতা উসকে দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা বাস্তব জীবনের সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। এর ফলে দেশজুড়ে উত্তেজনা ও অস্থিরতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।
এনসিএসএ উল্লেখ করে, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ইতোমধ্যে ব্যাপক সহিংসতা সৃষ্টি করেছে। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা চালালেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক, সহিংসতার আহ্বান, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও নির্বাচন ব্যাহত করার প্ল্যাটফর্মে পরিণত হচ্ছে।
চিঠিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ওসমান হাদির মর্মান্তিক মৃত্যু এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর হামলার ঘটনাকে এর উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি ফেসবুকে প্রকাশ্যে ওসমান হাদির মৃত্যুকে সমর্থন করেছেন। পাশাপাশি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার আহ্বান জানানো হয়। এসব বক্তব্য ছড়ানোর পরপরই প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার–এর কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, যা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, সহিংসতা উসকে দেওয়া ও সংগঠিত করার সঙ্গে জড়িত হিসেবে চিহ্নিত একাধিক অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করার অনুরোধ জানানো হলেও মেটা সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
চিঠিতে সতর্ক করে বলা হয়, সহিংসতামূলক কনটেন্টের অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার জাতীয় স্থিতিশীলতা, সামাজিক সম্প্রীতি, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য সরাসরি হুমকি। এ ক্ষেত্রে মেটার দায়িত্ব কেবল প্রযুক্তিগত নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ গণদায়িত্বও।
এ প্রেক্ষাপটে মেটাকে কয়েকটি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—সহিংসতা ও সামাজিক অস্থিতিশীলতা রোধে প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ক্ষেত্রে দায়িত্ব স্বীকার, বাংলাদেশ–সংক্রান্ত কনটেন্টে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড দ্রুত ও কঠোরভাবে প্রয়োগ, বাংলা ভাষায় কনটেন্ট মডারেশন ও সেন্টিমেন্ট অ্যানালাইসিস জোরদার করা এবং অন্তত নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ–সংক্রান্ত কনটেন্টে বাড়তি নজরদারি বজায় রাখা।
চিঠিতে আরও বলা হয়, গত ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে একটি প্রকৃত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়নি। আসন্ন নির্বাচন নাগরিকদের জীবন, গণতান্ত্রিক অধিকার, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এ অবস্থায় মেটা দায়িত্বশীলতা ও জরুরি মনোভাব নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে—এমন প্রত্যাশার কথাও জানানো হয়।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সন্ত্রাস ও সহিংসতার আহ্বানসংবলিত যেকোনো কনটেন্ট সরাসরি রিপোর্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, শনিবার থেকেই জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপ ও ই–মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ গ্রহণ করবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে