আসামের শিক্ষককে জোর করে বাংলাদেশে ‘ঠেলে দিল’ ভারতীয় পুলিশ
আসামের মরিগাঁও জেলার এক প্রাক্তন সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক খায়রুল ইসলামকে জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে ভারতীয় পুলিশ। ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে তুলে এনে সীমান্তের কাছে ফেলে দেয়া হয় বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক মাধ্যমে।
খায়রুল ইসলাম জানিয়েছেন, সোমবার (২৬ মে) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) যাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে, তিনি তাদেরই একজন। বর্তমানে তিনি ও আরও কয়েকজন 'নো ম্যানস ল্যান্ড'-এ অবস্থান করছেন। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল এক ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার কোনো এক মাঠে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন।
ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আমি পুলিশকে বলেছিলাম যে আমি একজন শিক্ষক, আমাকে সম্মান করা উচিত। কিন্তু তারা আমার হাত রশি দিয়ে বেঁধে রাখে, জোর করে বাসে তোলে। তারপর ভোর ৪টার দিকে আমাদের এপারে এনে নামিয়ে দেয়। মোট ১৪ জনকে এভাবে পুশ-ইন করা হয়েছে।’
জানা গেছে, খায়রুল ইসলাম আসামের থেংসালি খান্দাপুখুরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু ২০১৬ সালে একটি বিদেশি ট্রাইব্যুনাল তাকে ‘বিদেশি’ ঘোষণা করে। পরে গৌহাটি হাইকোর্ট ২০১৮ সালে সেই রায় বহাল রাখে। তাকে আটক করে মাতিয়া ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়, যেখানে তিনি দুই বছর কাটান। ২০২০ সালের আগস্টে তিনি জামিনে মুক্তি পান। তবে তার মামলাটি এখনও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন, যার সর্বশেষ শুনানি হয়েছিল ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর।
সাম্প্রতিক ঘটনায়, গত ২৩ মে আসাম পুলিশ তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পুনরায় মাতিয়া ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠায়। সেখান থেকেই ২৬ মে তাকে সীমান্তে নিয়ে গিয়ে জোর করে ঠেলে দেয়া হয়।
মাতিয়া ক্যাম্পের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি জানান, সেই দিন কয়েকজন বন্দীকে তিনটি বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাদের চোখ বাঁধা ছিল। তাদের সীমান্তে পৌঁছে দেয়া হয়।
বাংলাদেশি এক সাংবাদিককে খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আসতে রাজি হইনি, তাই তারা আমাকে মারধর করে।’ তার স্ত্রী রিতা খানম প্রশ্ন তুলেছেন, ‘যখন মামলাটি এখনও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন, তখন তারা কীভাবে এই পদক্ষেপ নিতে পারে?’
উল্লেখ্য, আসামে বিদেশি ট্রাইব্যুনালগুলোর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও নির্বিচারে সিদ্ধান্তের অভিযোগ রয়েছে। অনেককেই কেবল নথির খুঁত, বানান ভুল বা তথ্য মনে না থাকার কারণে বিদেশি ঘোষণা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
খায়রুল ইসলাম শেষ পর্যন্ত বলেন, ‘আমি ভারতেই জন্মেছি, আমার বাবা-মাও এখানে জন্মেছেন। আমি বহুবার বলেছি যে আমি একজন অসমিয়া। তবুও তারা আমাকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করেছে।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে