সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আঘাত: আর্টিকেল নাইনটিন
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, এ ধরনের পদক্ষেপ বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও ভিন্নমত প্রকাশের অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আর্টিকেল নাইনটিন জানায়, আনিস আলমগীর টেলিভিশন টক শোতে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য দেওয়ার জন্য পরিচিত। গত ১৪ ডিসেম্বর তাকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়। পরদিন মামলা দায়েরের আগে কয়েক ঘণ্টা তাকে ডিবি কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো অভিযোগ ছাড়াই একজন সাংবাদিককে আটক রাখা এবং পরে নিরাপত্তার অজুহাতে বিশেষ আইন প্রয়োগ করা অমার্জনীয়। এটি ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের মৌলিক নীতির পরিপন্থী।
আর্টিকেল নাইনটিন জানায়, এই মামলায় অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, মডেল মারিয়া কিশপট্ট এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজের নামও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ’ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্সের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, এটি ভীতি প্রদর্শনের একটি উদ্বেগজনক ধারা নির্দেশ করে। সম্প্রতি সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেলকেও ডিবি কর্মকর্তারা আটক করে দীর্ঘ সময় কার্যালয়ে বসিয়ে রাখার পর মুক্তি দিয়েছিলেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আনিস আলমগীরের গ্রেপ্তার সমালোচনামূলক কণ্ঠ দমনের একটি বিস্তৃত ও উদ্বেগজনক প্রবণতার প্রতিফলন। এ ধরনের পদক্ষেপ অতীতের সেই চর্চাগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীরা ভিন্নমত প্রকাশের কারণে হয়রানি, নির্বিচার আটক ও মিথ্যা মামলার শিকার হতেন।
আর্টিকেল নাইনটিনের মতে, সাংবাদিকতার পেশাগত কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে ন্যায়বিচারের নীতি ক্ষুণ্ন হয় এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর জনগণের আস্থা দুর্বল হয়। এসব ঘটনা মতপ্রকাশে সক্রিয় ব্যক্তিদের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির দিকটি তুলে ধরে এবং সামগ্রিক গণতান্ত্রিক পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সংস্থাটি আনিস আলমগীরকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে এবং তারসহ অন্যান্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়। একই সঙ্গে তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেলসহ সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধ করার এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে থাকা বাধ্যবাধকতা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।
আর্টিকেল নাইনটিন আরও বলেছে, মতপ্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তি। বাংলাদেশকে নিশ্চিত করতে হবে, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী সময়ে, সাংবাদিকেরা যেন প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের ভয় ছাড়াই তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
উল্লেখ্য, গত রোববার সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। পরদিন উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই দিনই পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার একটি আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে