চট্টগ্রাম বন্দর চুক্তি নিয়ে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র অভিযোগ আনু মুহাম্মদের
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নেদারল্যান্ডভিত্তিক এপিএম টার্মিনালসের কনসেশন চুক্তিকে ঘিরে স্বচ্ছতা, সময় নির্বাচন এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে তীব্র সমালোচনা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
সোমবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়োর মধ্যে সরকার বিদেশি কোম্পানি এবং তাদের দেশি স্বার্থান্ধ গোষ্ঠীর সুবিধায় চুক্তি করছে। এতে সরকার ইতিহাসে বিশ্বাসঘাতক হিসেবেই চিহ্নিত থাকবে।’
তিনি অভিযোগ করেন, যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ থেকেও জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তির বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দেয়নি, তারাও এই ‘বিশ্বাসঘাতকতার দায়’ এড়াতে পারবে না।
আনু মুহাম্মদ এই মন্তব্যের আগে আরেকটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেন, যেখানে চুক্তির সময়সূচিকে ‘পরিকল্পিত’ বলে উল্লেখ করা হয়। সেখানে বলা হয়, একই দিনে—১৭ নভেম্বর সকাল ১০টায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বন্দর চুক্তি এবং সকাল ১১টায় শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ ‘সন্দেহজনক দ্রুততা ও চালাকি’ তৈরি করেছে। স্ট্যাটাসে আরও বলা হয়, আগের দিনই ঢাকা ও চট্টগ্রামে পুলিশ ককটেল নিক্ষেপ বা অগ্নিসংযোগকারীদের গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে, অথচ এসব বিষয়ে আলোচনার সুযোগ না রেখে সরকার তড়িঘড়ি চুক্তি এগিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) ইতোমধ্যে এপিএম টার্মিনালস বিএভি-এর সঙ্গে লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনাল উন্নয়ন ও পরিচালনায় ৩০ বছরের কনসেশন চুক্তিতে সই করেছে। পিপিপি কাঠামোর আওতায় প্রতিষ্ঠানটি টার্মিনাল ডিজাইন, অর্থায়ন, নির্মাণ ও পরিচালনা করবে। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
চুক্তির দিনই দুপুরের পর ঘোষণা হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১-এর বিচারক মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেবেন। মামলার প্রধান আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে রয়েছেন। রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এর পটভূমিতে রয়েছে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনার পর ঢাকা মহানগর এবং চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল হামলাকারীদের গুলি করার নির্দেশ। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছে। তাদের মতে, সন্দেহভাজন কাউকেই আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া গুলি করার নির্দেশ সংবিধান-সম্মত নয়।
এই তিনটি ঘটনার সমন্বিত প্রেক্ষাপট থেকেই আনু মুহাম্মদ সরকারের উদ্দেশ্য, চুক্তির স্বচ্ছতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার ভাষ্য, ‘যারা সংস্কারের কথা বলছেন, তাদের এসব বিষয়ে কথা বলা উচিত ছিল। কিন্তু আলোচনার সুযোগ না রেখে এমন দ্রুততার সঙ্গে কাজ সম্পন্ন করা সন্দেহজনক।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে