Views Bangladesh Logo

বাংলাদেশে সোনালি মুরগির মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া: গবেষণা

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত সোনালি মুরগির মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ইশেরেশিয়া কোলাই (ই. কোলাই)-এর উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকরা। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বাংলাদেশি গবেষকরা।

গবেষণায় বলা হয়, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বর্তমানে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান হুমকি। বিশেষ করে বর্ধিত স্পেকট্রাম বিটা-ল্যাকটামেজ (ইএসবিএল) উৎপাদনকারী ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া মানুষের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। কারণ, এসব ব্যাকটেরিয়া পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিনসহ নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা ঠেকিয়ে দেয়, ফলে চিকিৎসা ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এই গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল সোনালি মুরগির মাংসে থাকা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ-প্রতিরোধী ই. কোলাই শনাক্ত করা এবং তাদের আণবিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করা। এ জন্য ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নরসিংদী জেলার ছয়টি উপজেলা থেকে ৩৯০টি কাঁচা মাংসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, এর মধ্যে ৬৮ দশমিক ২১ শতাংশ নমুনায় ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ ছিল এনটেরোপ্যাথোজেনিক এবং ৯২ দশমিক ১১ শতাংশ ছিল নন-এনটেরোপ্যাথোজেনিক ই. কোলাই।

গবেষকেরা ডিস্ক ডিফিউশন পদ্ধতিতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সংবেদনশীলতা পরীক্ষা করে দেখেছেন, এই ব্যাকটেরিয়াগুলোর অ্যামপিসিলিনের বিরুদ্ধে শতভাগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া এরিথ্রোমাইসিনের বিরুদ্ধে ৮৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোসপোরিনের বিরুদ্ধেও উচ্চমাত্রায় প্রতিরোধ লক্ষ্য করা গেছে। সবচেয়ে কম প্রতিরোধ লক্ষ্য করা গেছে অ্যামোক্সিসিলিন-ক্ল্যাভুলানেটের ক্ষেত্রে, যা ছিল মাত্র ৩ দশমিক ০১ শতাংশ। এছাড়া, ৪১ দশমিক ৭৩ শতাংশ নমুনায় ইএসবিএল উৎপাদনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিশেষ করে নন-এনটেরোপ্যাথোজেনিক ই. কোলাইয়ের মধ্যে এ হার আরও বেশি ছিল।

গবেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, এ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া জনস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। সোনালি মুরগির খামারে অ্যান্টিবায়োটিকের যথাযথ, সচেতন ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমে গিয়ে আরও ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ