প্রতিটি আক্রমণের বিচার এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেই হতে হবে
সামিনা লুৎফা নিত্রা একজন আপসহীন শিক্ষক আর মঞ্চের এক দাপুটে অভিনেত্রীর নাম। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তিনি নাট্যদল বটতলার প্রধান কুশীলব হিসেবে প্রায় একযুগ মঞ্চে দাপিয়ে অভিনয় করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি তিনি দেশে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থান ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভিউজ বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ভিউজ বাংলাদেশের সিনিয়র রিপোর্টার হিরা তালুকদার।
ভিউজ বাংলাদেশ: একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ কী হতে পারে?
সামিনা লুৎফা নিত্রা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, দেশের পুরোনো রাজনৈতিক কাঠামো এবং প্রতিষ্ঠানের কাঠামো, তার মানে বিচার বিভাগের যে অবস্থা, সেনাবাহিনীর মধ্যে যে বিভাজিত বিভিন্ন রকম পলিটিসাইজেশন এবং প্রশাসনসহ ব্যুরোক্রেসিতে যে ধরনের রাজনৈতিক বিভাজন রয়েছে, সেগুলো তাদের বাধাগ্রস্ত করবে। তাদের সবচেয়ে বড় জায়গাটি হচ্ছে, তারা একটি গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এসেছে। সুতরাং তাদের সেই অর্থে অনেক কিছু করার সুযোগ আছে, যদি তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে।
ভিউজ বাংলাদেশ: এই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব!
সামিনা লুৎফা নিত্রা: বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, সেই গণঅভ্যুত্থানে নিহত মানুষের কাছে তাদের রক্তের সঙ্গে শপথ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলেছে, তারা বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চান। আদতে বৈষম্যহীন কোনো সমাজ আমরা এখনো পৃথিবীতে পাইনি; কিন্তু বৈষম্যহীন সমাজের দিকে যাওয়ার প্রচেষ্টা যদি শুরু হয়, তাহলেও কিন্তু সমাজ থেকে অনেক বৈষম্য দূর হবে; কিন্তু এটা তাদের প্রতিজ্ঞা এবং ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।
ভিউজ বাংলাদেশ: গণঅভ্যুত্থানের পরে একাত্তরের স্মৃতিস্তম্ভগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ৩২ নম্বর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, কণ্ঠশিল্পী রাহুল আনন্দসহ অনেককে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে, অসংখ্য ভাস্কর্য ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, ফলে আন্দোলনকারীদের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
সামিনা লুৎফা নিত্রা: আন্দোলনকারীরা একটি ভয়ংকর স্বৈরাচারী ব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে একটি নতুন সরকারের রূপরেখা তৈরি করেছে। ফলে তাদের ওপর ক্ষেপে থাকা মানুষের সংখ্যা কম নয়, এর আগে যারা ক্ষমতায় ছিল, অর্থাৎ আওয়ামী লীগের বিশাল জনবাহিনী তো বাংলাদেশেই আছে। মনে রাখতে হবে, তাদের নেতা পালিয়ে গেছেন, তাদের নেতারা পালিয়ে গেছেন, তাদেরকে একা রেখে অরক্ষিত রেখে পালিয়ে গেছেন; কিন্তু এই পুরো সাংগঠনিক কাঠামো তো রয়ে গেছে, ফলে তারা আন্দোলকারীদের রাজনৈতিক বিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইবেন- এটাই তো স্বাভাবিক; কিন্তু যে আক্রমণগুলো হচ্ছে, সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
এ আক্রমণগুলো কাদের মাধ্যমে হচ্ছে। যেমন আমরা গতকালই শহীদ মিনারে গ্রাফিতি আঁকা নিয়ে গণ্ডগোলের সূচনা থেকে দেখতে পেলাম, আসলে একটি বিশেষ মহল টাকা দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নাশকতাগুলো করাচ্ছে। তারা আসলে দেখাতে চায়, বাংলাদেশ একটি ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে এখনো বেশির ভাগ মানুষ মুসলমান, তার মানে কিন্তু বাংলাদেশ ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে যায়নি। ফলে এ জায়গাটা বোঝা দরকার অন্য দেশের যে রাজনীতি, সেই রাজনৈতিক প্রশ্নে আমরা কীভাবে এটাকে ডিল করব; কিন্তু প্রতিটি আক্রমণ এবং হত্যা নিন্দাজনক, প্রতিটি আক্রমণের বিচার এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেই হতে হবে, তা না হলে তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কিছু করার নেই। কারণ শিক্ষার্থীরা এগুলো পাহারা দেয়ার চেষ্টা করছে, জীবন দিয়েছে। তিন সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করেছে। অথচ এগুলো তাদের করার কথা ছিল না। এগুলো করার জন্য তো সেনাবাহিনী আছে, পুলিশ আছে, তারা বেতন নিয়ে আমাদের অরক্ষিত রেখেই বসে বসে ঘুমাচ্ছেন। রাজনৈতিক খেলাই এটা। এগুলো হচ্ছে এই সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।
ভিউজ বাংলাদেশ: সারা দেশে যে এই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে এবং অরাজকতা চলছে, এর জন্য কারা দায়ী?
সামিনা লুৎফা নিত্রা: এটা তদন্ত না হলে কীভাবে বলব, তবে আমি এর দায় অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপরে দেব। কারণ তারা ক্ষমতা নেয়ার আগেই আমাদের নিরাপত্তা দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন; কিন্তু কই গেলো সেই নিরাপত্তা। এত বড় আন্দোলন করে এখনো কেন ছাত্রদের সারা দিন-রাত রাস্তায় থাকতে হবে? এতে তো বোঝাই যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন না।
ভিউজ বাংলাদেশ: আমাদের সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
সামিনা লুৎফা নিত্রা: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে