আবু সাঈদের মাথার পেছনে গুলি ছিল, ট্রাইব্যুনালে বাবার জবানবন্দি
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মাথার পেছনে গুলি ছিল বলে জানিয়েছেন তার বাবা মকবুল হোসেন। তিনি বলেন, দাফনের জন্য গোসল করানোর সময় তিনি আবু সাঈদকে একবার দেখেছেন। তখন দেখতে পান, আবু সাঈদের মাথার পেছনে গুলির জায়গা থেকে রক্ত ঝরছে। বুকে গুলির চিহ্ন, সারা বুক দিয়ে রক্ত ঝরছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জবানবন্দি দিতে গিয়ে মকবুল হোসেন এ তথ্য জানান।
এ মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে মকবুল হোসেন ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন।
মকবুল হোসেন বলেন, ঘটনার দিন মাঠ থেকে বাসায় এসে দেখলাম সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েছে। শুনলাম আবু সাঈদের শরীরে গুলি লেগেছে। কিছুক্ষণ পর জানলাম সে মারা গেছে। এতে মাথায় আসমান ভেঙে পড়ে।
তিনি জানান, দুই ছেলে ও দুই মেয়ের স্বামী রাত সাড়ে ৩টার দিকে মরদেহ নিয়ে বাড়িতে পৌঁছান। প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাতেই দাফনের নির্দেশনা আসলেও পরিবারের লোকেরা রাজি হননি। পরের দিন সকাল ৯টায় দুই জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে ছেলের লাশ দাফন করা হয়।
জবানবন্দিতে মকবুল হোসেন বলেন, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক আমির হোসেন ও সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় তার ছেলেকে গুলি করেছেন। এর কয়েক দিন আগে আবু সাঈদের গলা চেপে ধরে থাপ্পড় দিয়েছিলেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া। তার ছেলেকে যারা শহীদ করেছে, তিনি তাঁদের বিচার চান।
আজ বেলা ১১টার দিকে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। বেলা ১টার দিকে ট্রাইব্যুনাল বিরতিতে যান। আবার বেলা ৩টার দিকে ট্রাইব্যুনাল বসবেন।
এই মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার গতকাল বুধবার শুরু হয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জন এই মামলায় আসামি।
আসামিদের মধ্যে সাবেক উপাচার্যসহ ২৪ জন পলাতক। অন্য ছয় আসামি কারাগারে আছেন। তারা হলেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক সাবেক কর্মচারী আনোয়ার পারভেজ, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।
গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। তাঁকে হত্যার ভিডিও সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে। ভিডিওতে দেখা যায়, আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন আর পুলিশ তার বুকে একের পর এক গুলি করছে। এ হত্যাকাণ্ড আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সারা দেশে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় গত ২৪ জুন ৩০ জনকে আসামি করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। পরে ৬ আগস্ট আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে