সহিংসতায় জড়িতদের ভোট দেবেন না ৯২ শতাংশ ভোটার: জরিপ
বাংলাদেশের ভোটারদের কাছে এখন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক প্রত্যাশা হয়ে উঠেছে জানমাল ও আইন-শৃঙ্খলার নিরাপত্তা। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, ৪০ শতাংশ ভোটার আগামী সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। একই সঙ্গে ৯২ শতাংশ ভোটার জানিয়েছেন, সহিংসতায় জড়িত কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে তারা ভোট দেবেন না।
নভেম্বর ২০২৫-এ পরিচালিত এই জরিপের ফলাফল ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ও যমুনা টেলিভিশনের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক নাগরিক সংলাপে তুলে ধরা হয়। জরিপে আরও দেখা যায়, ৪৯ শতাংশ নাগরিক মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলো দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ ছাড়া এখনো ৩৩ শতাংশ ভোটার সিদ্ধান্তহীন অবস্থায় রয়েছেন, যাদের আস্থা অর্জন করাই রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নাগরিক সংলাপের শুরুতে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি চিফ অব পার্টি আমিনুল এহসান বলেন, নিরাপত্তাহীনতা শুধু মানুষের দৈনন্দিন জীবন নয়, ভোটার অংশগ্রহণ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর আস্থাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীম রেজা বলেন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একপক্ষ বাড়তি সুবিধা পাওয়ায় অন্যরা বঞ্চিত হয়, আর এই কাঠামোগত বৈষম্য থেকেই সংঘাত ও সহিংসতার জন্ম হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রভাষক সাইমী ওয়াদুদ বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি সহিংসতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়। তাঁর মতে, কেবল আইন প্রয়োগ যথেষ্ট নয়; রাজনৈতিক সংস্কার এবং দলগুলোর ভেতরের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন জরুরি।
সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. সাজেদুল হক রুবেল বলেন, রাজনৈতিক অর্থনীতিতে পরিবর্তন না এলে সহিংসতার সংস্কৃতি দূর হবে না। কালো টাকার মালিক ও অসৎ আমলাদের রাজনীতিতে প্রবেশ বন্ধ না করা গেলে সহিংসতা থামবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাজনূভা জাবীন বলেন, রাজনীতিবিদদের উস্কানিমূলক বক্তব্য অনলাইন ও অফলাইনে সরাসরি সহিংসতাকে উসকে দেয়। প্রার্থীরা যদি একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার বন্ধ করেন, তাহলে সহিংসতা অনেকটাই কমবে। তিনি আরও বলেন, দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র, সাংবিধানিক পদে নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ব্যবস্থা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হলে রাজনীতি সংঘাতমুক্ত হতে পারে।
জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান বলেন, রাজনৈতিক দলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে পুলিশ ও প্রশাসন বেপরোয়া হয়ে উঠছে, যা বন্ধ করা জরুরি। সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে দলের কঠোর অবস্থান ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘লাল কার্ড’ না দেখালে সহিংসতা বন্ধ হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা জনগণের প্রধান চাওয়া হলেও নির্বাচনী প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় স্বার্থান্বেষী মহল সহিংসতা উসকে দিচ্ছে। তিনি দাবি করেন, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা রাজনৈতিক নয়, বরং পরিকল্পিত মব সন্ত্রাস। পাশাপাশি তিনি জানান, বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও এককভাবে সরকার গঠন করবে না এবং বিরোধী দলকে সংসদের আসন সংখ্যার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে না।
এফসিডিও’র আর্থিক সহায়তায় ‘বি-স্পেস’ প্রকল্পের আওতায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ও যমুনা টেলিভিশনের আয়োজনে “সংঘাত-সহিংসতা মুক্ত হোক রাজনীতি” শীর্ষক এই নাগরিক সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে