Views Bangladesh Logo

পর্ব ২

৯০ শতাংশ গণমাধ্যম সময়মতো আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেয় না

Kamal  Ahmed

কামাল আহমেদএর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকার

প্রথম পর্বের পর
হুবিধ ও বহুমুখী সংকটে জর্জরিত বাংলাদেশের গণমাধ্যমের যুগোপযোগী, কার্যকর সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের ১১ সদস্যের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন এরই মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যাতে গণমাধ্যমের মালিকানা, আয়-ব্যয়, বিজ্ঞাপন বাজার, আর্থিক নিরাপত্তা, বিটিভি-বেতার-বাসস সম্পর্কে করণীয়, সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও সুরক্ষাসহ নানা বিষয়ে ২০ দফা সুপারিশ করেছেন কামাল আহমদের নেতৃত্বাধীন এই কমিশন। এই ২০ দফার অধীনে রয়েছে আরও বেশ কিছু উপদফা। যাতে বিভিন্ন বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। একইসঙ্গে এই বিষয়গুলো কার্যকরে ‘বাংলাদেশ গণমাধ্যম কমিশন অধ্যাদেশ: ২০২৫’-এর খসড়াও পেশ করেছে কমিশন। এই খসড়া অধ্যাদেশ এখন অন্তর্বর্তী সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা প্রত্যাশা করছেন খুব দ্রুত এই কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো আইনি ভিত্তি পাবে। এই কমিশন গঠন, কার্যক্রম, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধা-প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কামাল আহমেদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাহাত মিনহাজ। সেই সাক্ষাৎকার ভিউজ বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। পাঁচ পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ প্রকাশিত হলো দ্বিতীয় পর্ব:

ভিউজ বাংলাদেশ: সংস্কার কমিশন প্রথম সুপারিশ করেছে মালিকানা নিয়ে। বাংলাদেশে কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের একাধিক গণমাধ্যমের মালিকানা রয়েছে। খুব সম্ভবত এই ধরনের মালিকানা কাঠামো গণমাধ্যমের ইকো সিস্টেমকেই ধ্বংস করে ফেলছে। যখন মালিকানা কাঠামো নিয়ে কাজ করছিলেন তখন আপনারা কোন কোন বিষয় বিবেচনা করেছেন। সেগুলোকে কি বাস্তবায়ন করা সম্ভব?

কামাল আহমেদ: অবশ্যই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আমরা অবাস্তব কোনো সুপারিশ এখানে করিনি। এটা আমাদের কেউ চাপিয়েও দেয়নি। আমরা দেখতে চেয়েছি গণমাধ্যমের সংকট কোথায়? সংকটের উৎস কী? এবং সেটা সমাধানের জন্য ঐতিহাসিক কোনো শিক্ষা আমাদের আছে কি না? আর সারা দুনিয়ায় একই ধরনের পরিস্থিতি কীভাবে অন্যরা মোকাবেলা করেছে, এ ক্ষেত্রে সেরা বা উত্তম চর্চা থেকে শিক্ষা নেয়ার চেষ্টা করেছে সংস্কার কমিশন।

অন্তর্বর্তী সরকারের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের আগে বাংলাদেশে ১৯৮৩ সালে আরেকটা প্রেস কমিশন হয়েছিল। তখন টেলিভিশন বা রেডিও প্রাইভেট সেক্টরে ছিল না। শুধু ব্যক্তিমালিকানা খাতের সংবাদপত্র ছিল। সে কারণে শুধু সংবাদপত্র বিষয়ে প্রেস কমিশন হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে। আর সেই প্রেস কমিশনের সদস্য ছিলেন তখনকার নামকরা সব সম্পাদক। দ্য বাংলাদেশ অবজারভারের ওবায়দুল হক, দৈনিক ইত্তেফাকের আখতারুল আলম, দৈনিক বাংলার আহমেদ হুমায়ুন, দ্য হলিডের এনায়েতউল্লাহ খান- এরা সবাই ছিলেন সেই প্রেস কমিশনের সদস্য। সেই কমিশন সুপারিশ করেছিল, পত্রিকার মালিকানায় বা ওনারশিপে ডিফিউশন দরকার। ডিফিউশন বলতে তারা আসলে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেটা হচ্ছে- চাকরিজীবী ও সাংবাদিকদের মধ্যে শেয়ার বিতরণ করা বা শেয়ার দিয়ে দেয়া উচিত। তাদের ওই চিন্তার যুক্তি কী ছিল? সেটা ছিল, সংবাদমাধ্যমে যাতে একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত স্বার্থের আধিপত্য (ডমিনেন্স) না থাকে। প্রতিষ্ঠানে যাতে একটা গণতান্ত্রয়ণ থাকে। সেই সুপারিশ বা চিন্তা ১৯৮৩ সালের প্রেস কমিশনের ছিল।

ভিউজ বাংলাদেশ: কিন্তু এক্ষেত্রে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটগুলো কী কী। আপনারা কি সেগুলো বিবেচনায় নিয়েছেন?

কামাল আহমেদ: আমরা সারা দুনিয়ার চর্চাগুলো (প্র্যাকটিস) দেখছি। আপনি খোঁজ করে দেখুন, ভারতের বড় বড় পত্রিকাগুলো পাবলিক কোম্পানি। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বড় বড় মিডিয়া টাইকুনদের কথা বলা হয়। তাদের নিয়ন্ত্রণ ব্যাপক। তাদের একাধিক গণমাধ্যম আছে। যেমন; রুপার্ট মারডক, মাইকেল ব্লুমবার্গ। রুপার্ট মারডক ও মাইকেল ব্লুমবার্গের কোম্পানিগুলো কিন্তু শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। যার ফলে গণমাধ্যম কোম্পানিতে তাদের পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ ঠিকই থাকে; কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে জবাবদিহিও থাকে। তাদের এক ধরনের বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করতে হয়। নিয়মনীতি মানতে হয়। বছর শেষে বার্ষিক সাধারণ সভা করতে হয়। যেখানে সারা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে হয়। গণমাধ্যমের ব্যবসায়িক নীতিমালার ব্যাখ্যা দিতে হয়। এটা এক ধরনের স্বচ্ছতা (ট্রান্সপারেন্সি)। এক ধরনের দায়বন্ধতা (অ্যাকাউন্টিবিলিটি)। আমরা সে ধরনের কথা কেন চিন্তা করব না?

ভিউজ বাংলাদেশ: ইউরোপ-আমেরিকা বাদে এশিয়া বা বাংলাদেশের প্রতিবেশী কোনো দেশের উদাহরণ কি আপনারা বিবেচনায় নিয়েছেন?

কামাল আহমেদ: এক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়া একটা বড় উদাহরণ। ইন্দোনেশিয়ায় যে কোনো নাগরিক গণমাধ্যমের মালিক হতে পারেন; কিন্তু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান করলে সেটাকে কর্পোরেশন করতে হবে। কর্পোরেশন মানে, বিনিয়োগের জন্য জনগণকে শেয়ারের সুযোগ দিতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক। তা না হলে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত হবে না। ইন্দোনেশিয়া পারলে আমরা কেন পারব না? আমাদের এখানেও তাই হওয়া উচিত। দেশে বড় বা মাঝারি সাইজের যেসব গণমাধ্যম আছে সেগুলোর প্রত্যেকটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি করা হোক। জনগণকে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হোক। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হোক। তাহলে অন্তত বছরে একবার হলেও শেয়ারহোল্ডারদের কাছে তারা কী ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, কী হিসাব দিচ্ছেন সেগুলো আমরা জানতে পারব। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে লাভ হচ্ছে না লোকসান হচ্ছে সেটাও জানা যাবে। জানা যাবে কোম্পানির বিনিয়োগের উৎস কী? এছাড়া মালিক কারা, কার কত শতাংশ নিয়ন্ত্রণ আছে সেগুলোও সবাই জানতে পারবে। এই স্বচ্ছতাটা তো দরকার। পাঠক, দর্শক, শ্রোতা- তাদের ইনফর্ম চয়েসের অধিকার আছে। আমি যেন জেনে বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারি, আমি যে সংবাদপত্রটা কিনছি, এই সংবাদপত্রে কার স্বার্থের কথা প্রতিফলিত হচ্ছে বা হচ্ছে না। আমি যে টেলিভিশনে খবর দেখছি, সেই টেলিভিশনে কার স্বার্থ প্রতিফলিত হচ্ছে বা হচ্ছে না সেটা জেনেশুনেই পাঠক বা দর্শক-শ্রোতা সিদ্ধান্ত নেবেন। সেজন্যই এই স্বচ্ছতা দরকার। আমরা সুপারিশে সেই কথাটাই বলেছি।

ভিউজ বাংলাদেশ: কিন্তু বাংলাদেশে ছোট ছোট অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান আছে। তারা কি এই বিষয়গুলো মেনে চলতে সক্ষম?

কামাল আহমেদ: যারা ছোট প্রতিষ্ঠান বা নতুন উদ্যোক্তা- তারা হয়তো শুরু থেকে এটা পারবেন না। যদি কেউ করতে পারেন সেটা ভালো। না হলে সেটার জন্য সময় লাগতে পারে। এটা হলো একটি বিষয়। দ্বিতীয় হলো, এই মালিকানার প্রশ্ন কেন এত জোরালো হয়ে উঠছে? সেটা হলো- গণমাধ্যমের একটা প্রভাবক ক্ষমতা আছে। খুব সহজেই জনমতকে প্রভাবিত করতে পারে। এই প্রভাবক ক্ষমতাকে আপনি যখন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, ব্যবসা বা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে চান তখন সেটা দেশ-জনগণ বা সাধারণের জন্য লাভজনক নাকি ক্ষতির কারণ হচ্ছে সেটা কি বিবেচনা আমরা করব না? সেটাতো বিবেচনা করতে হবে। সেই বিবেচনা থেকেই এই প্রশ্নটা এসেছে, যেন কারও হাতে গণমাধ্যমের মালিকানা কেন্দ্রীভূত না থাকে। সেজন্য সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্রস ওনারশিপ নিষিদ্ধ। আমরা সে কারণেই বলেছি যে ‘ওয়ান মিডিয়া ওয়ান হাউজ’ অথবা ‘ওয়ান হাউজ পলিসি’ বাংলাদেশে কার্যকর হোক।

ভিউজ বাংলাদেশ: এটা বাস্তবায়নে অনেক প্রতিবন্ধকতা আসার কথা, বাধা আসার কথা?

কামাল আহমেদ: হ্যাঁ, এই নীতি বাস্তবায়নে অনেকগুলো বাধা আছে। নতুন করে বাধা তৈরিও হচ্ছে। নানা রকম সমালোচনাও আমরা ইতোমধ্যে শুনতে পাচ্ছি। উদাহরণ হিসেবে একটু আগে আমি রুপার্ড মারডক বা মাইকেল ব্লুমবার্গের কথা বলেছি। বর্তমানে বাংলাদেশে একাধিক মিডিয়ার মালিকরা বৈশ্বিক মিডিয়া টাইকুনদের উদাহরণ দেন। বলেন তাদের তো সংবাদপত্র, টেলিভিশন, অনলাইন, রেডিও সবই আছে। সব ধরনের ব্যবসা আছে; কিন্তু ওইখানে বাংলাদেশের মালিকরা ভুলে যাচ্ছেন, সেগুলো প্রত্যেকটাই পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। এই কোম্পানিগুলোতে স্টেকগুলো নির্ধারণ করা আছে ভিন্নভাবে। বাংলাদেশের মালিকরা ভারতের উদাহরণ দিচ্ছেন; কিন্তু ভারতের গণমাধ্যমকে আদর্শ হিসেবে ধরা যায় না। আমি দুঃখিত। যে কারণে ভারতে ‘গোদি মিডিয়া’র বিকাশ হয়েছে। তারপরও ভারতের অনেকগুলো সংবাদপত্র স্টক মার্কেটের তালিকাভুক্ত। আমরা তাই ক্রস ওনারশিপটা বন্ধের জন্য বলেছি। এর মূল কারণ এতে কয়েকটি গোষ্ঠীর হাতে অতিমাত্রায় ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ হয়ে গেছে। একই হাউজে একই ভাষায় দুটো দৈনিক পত্রিকা বের হচ্ছে। সেই হাউজেই আবার ইংরেজি পত্রিকা আছে। সেই হাউজেই রেডিও আছে। সেই হাউজেই আছে দুটো টেলিভিশন। অনলাইন পোর্টাল আছে। আবার শোনা যায়, বেনামে তাদের অন্য গণমাধ্যমেও বিনিয়োগ আছে। অন্য আরও এরকম হাউজ আছে, যাদের টেলিভিশন ও দৈনিক পত্রিকা- দুটোই আছে। আবার এরকম হাউজও আছে, যেখানে দুটো টেলিভিশন চ্যানেল আছে একই মালিকানায় এবং দুই চ্যানেলেই নিউজ অ্যান্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স প্রোগ্রাম সম্প্রচারিত হয়। এগুলো বাজারে স্বচ্ছ এবং ন্যায্য প্রতিযোগিতার পরিপন্থি।

ভিউজ বাংলাদেশ:
কমিশনের কাজ করতে গিয়ে আপনারা আর্থিক স্বচ্ছতার (ফিনান্সিয়াল ট্রান্সপারেন্সি) কথা বারবার বলেছেন। এ বিষয়ে যখন কমিশন কাজ করেছে তখন কী কী তথ্য পেয়েছে। বাংলাদেশে কতগুলো গণমাধ্যম আয়-ব্যয়ের হিসেব জমা দেয়। গণমাধ্যমগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি কতটুকু?

কামাল আহমেদ: আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব জমা দেয়-ই না। এটা বিস্ময়কর ঘটনা। রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজের কাছে আমরা সরকারি তালিকাভুক্ত প্রথম দিকের যে পত্রপত্রিকাগুলোর অডিটেড অ্যাকাউন্টস, লাইসেন্সপ্রাপ্ত টেলিভিশন ও রেডিওর প্রত্যেকের অডিটেড অ্যাকাউন্টস ও কোম্পানির বিস্তারিত চেয়েছিলাম তারা সব তথ্য দিয়েছে। সবগুলোই আমরা পেয়েছি। ৯০ শতাংশ গণমাধ্যমই সময়মতো হিসাব জমা দেয় না। কোনো কোনো কোম্পানি ২০১৩ সালের পর থেকে কোনো হিসাব জমা দেয়নি। কোনো কোনো কোম্পানি ২০০৯ সালের পর কোনো হিসাব জমা দেয়নি। কারও কারও হিসাব ২০১৮ সালের, ২০২১ সালের, ২০২৩ সালের। এরকম অদ্ভুত অদ্ভুত সব পরিস্থিতি। অর্থাৎ সেখানে কেউ আইন মানছে না। আর আইন মানানোর জন্যও সরকারিভাবে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না।

ভিউজ বাংলাদেশ: কেন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো হিসাব জমা দেয় না। প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষমতাসীন সরকারকে সার্ভ করে থাকে বলে তারা কি নিজেদের খুব ক্ষমতাবান বলে মনে করে থাকে?

কামাল আহমেদ: শুধু তাই না, মিডিয়াকে ভয় পায় সরকারি দপ্তরগুলো।

ভিউজ বাংলাদেশ: ভয় পায়?

কামাল আহমেদ: অবশ্যই। সরকারি দপ্তরগুলো মিডিয়াকে ভয় পায়। প্রতিষ্ঠানগুলো চিন্তা করে, একে ঘাটালে কী হবে? সে কারণে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয় না; কিন্তু দেশের কোম্পানি আইনে বলা আছে, আপনি যদি বছর শেষে অডিটেড অ্যাকাউন্টস জমা না দেন, সেক্ষেত্রে তারা আপনাকে জরিমানা করতে পারবে, আপনার ডিরেক্টরশিপ কেড়ে নিতে পারবে। এখন যে কোম্পানি ২০১৩ সাল থেকে গত ১২ বছরে অডিটেড অ্যাকাউন্টস জমা দেয়নি, তার তাহলে কী হওয়া উচিত?

আমরা গত ২-৩ বছরের হিসাব দেখেছি। তারমধ্যে না হলেও দেড় ডজন প্রতিষ্ঠান মুনাফা করছে। যদি দেড় ডজন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান লাভজনকভাবে পরিচালিত হতে পারে তাহলে সেই সব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীরা কেন আকৃষ্ট হবেন না?

অনেকে সমালোচনা করেছেন যে, আমি খুব আদর্শবাদী (আইডিয়ালিস্টিক) একটা ফর্মুলা দিয়েছি। যার মধ্যে অন্যতম গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা। যেহেতু গণমাধ্যম একটা রুগ্ন শিল্প, কেউ এটাতে সাবস্ক্রাইব করতে আগ্রহী হবেন না। ব্যর্থ হবে এই প্রজেক্ট; কিন্তু আমি একটু বললাম যে, ১৮টি কোম্পানির হিসাবে আমরা দেখেছি, ১৮টির বেশি আসলে যারা লাভ করে। তাহলে সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে কেন আগ্রহী হবে না? সুতরাং এটা মোটেই শুধু আদর্শ কল্পনা না। এটা বাস্তবসম্মত আদর্শ। বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ এবং সেটা সহজেই করা সম্ভব। আমরা সেই সুপারিশ করেছি।

ভিউজ বাংলাদেশ: আপনার কমিশন তো মালিকানার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা রেখেছে। বিশেষ করে ক্রসওয়ানশিপের ক্ষেত্রে?

কামাল আহমেদ: ক্রস ওনারশিপের ক্ষেত্রে আমরা বলেছি, এটা নিষিদ্ধ করা হোক। এটা সরকার এখনই করতে পারে। এখন করতে পারে এই অর্থে, এখন থেকে যারাই লাইসেন্স চাইবে তাদের কারও ক্ষেত্রেই কাগজ (সংবাদপত্র) থাকলে টেলিভিশনের লাইসেন্স দেয়া হবে না, টেলিভিশন থাকলে কাগজের লাইসেন্স দেয়া হবে না। এরকম নীতি সরকার নিতে পারে, ঘোষণা করতে পারে। যারা অলরেডি একাধিক প্ল্যাটফর্ম বা গণমাধ্যমের মালিক তাদের একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে, সেটা এক বছর হতে পারে, দুই বছর হতে পারে বা ছয় মাসও হতে পারে- তাদের পরিবর্তন করতে হবে। মালিকদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ব্যবসা নতুন করে তারা কীভাবে পুনর্গঠন করবেন। এই পুনর্গঠনের পদ্ধতি হতে পারে তারা যে কোনো একটি বিক্রি করে দেবেন অথবা সবগুলো মিলিয়ে মার্জ করে খুব বড় আকারে একটি প্রতিষ্ঠান চালাবেন। একটা খুব বৃহৎ আকারের টেলিভিশন চ্যানেল হতে পারে, একটা খুব বৃহৎ আকারের খবরের কাগজ হতে পারে। সেভাবেই এটার সমাধান সম্ভব।
(চলবে)


সাক্ষাৎকার গ্রহীতা রাহাত মিনহাজ, সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।


আরো পড়ুন

প্রথম পর্ব: রাজনৈতিক লক্ষ্য বাস্তবায়নে লাইসেন্স নেয়া মানেই সাংবাদিকতা করার সুযোগ বন্ধ করা

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ