Views Bangladesh Logo

আইসিইউতে ৪১ শতাংশ রোগীর দেহে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর: আইইডিসিআর

দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ও নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহারের কারণে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর)। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সর্বশেষ জাতীয় জরিপে দেখা গেছে—আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৪১ শতাংশের শরীরে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কার্যকর হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ পরিস্থিতি জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে আইইডিসিআরের নতুন ভবনে এএমআর–বিষয়ক জাতীয় জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন হাবিব জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন। জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত চালানো কেস–ভিত্তিক এই নজরদারিতে ৯৬ হাজারের বেশি রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। পাঁচটি আইসিইউ থেকে সংগৃহীত নমুনায় ৭১ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষা করে দেখা যায়—উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীর দেহে কোনো ওষুধই কাজ করছে না।

অধ্যাপক হাবিব বলেন, অপ্রয়োজনীয় ও নিয়মবহির্ভূত অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের ফলে জীবাণুর প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত বাড়ছে, যা এখন জনস্বাস্থ্যের বড় সংকটে পরিণত হয়েছে। তিনি সবাইকে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান।

জরিপে দেখা যায়, দেশে ব্যবহৃত মোট অ্যান্টিবায়োটিকের ৫৭ শতাংশই ঢাকায় ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষায়িত হাসপাতাল ও রোগীর চাপ বেশি থাকায় রাজধানীতে এ হার তুলনামূলকভাবে বেশি। ঢাকার পরের অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেট। ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) আক্রান্ত রোগীদের মধ্যেও উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে।

দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে রয়েছে সেফট্রিয়াক্সন, সেফিক্সিম, মেরোপেনেম, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, আজিথ্রোমাইসিন, অ্যামোক্সিসিলিন, মেট্রোনিডাজল, ক্লক্সাসিলিন, পিপেরাসিলিন–ট্যাজোব্যাকটাম ও ভ্যানকোমাইসিন। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, ব্রড–স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার ভবিষ্যতের পরিস্থিতিকে আরও সংকটজনক করে তুলতে পারে।

আইইডিসিআর জানিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধও দ্রুত বাড়ছে। কার্বাপেনেম–রেজিস্ট্যান্ট এন্টারোব্যাকটেরিয়াসির (CRE) ক্ষেত্রে অনেক নমুনায় প্রতিরোধের হার ৫০–৭০ শতাংশে পৌঁছেছে। মেথিসিলিন–রেজিস্ট্যান্ট স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াসের (MRSA) বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ ক্ষমতা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিনা প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ সেবন, প্রাণিসম্পদ খাতে নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতা—সব মিলেই এ সংকট আরও গভীর হচ্ছে। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে সাধারণ সংক্রমণও প্রাণঘাতী হয়ে উঠার আশঙ্কা রয়েছে। 

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ