হাতকড়া-শিকল পরিয়ে ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠালো যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩০ জন বাংলাদেশিকে হাতকড়া ও পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে একটি বিশেষ বিমানে করে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।
বিমানবন্দরের সূত্রে জানা গেছে, রাত ১১টার দিকে বিমানটি অবতরণ করার পর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে প্রবাসীদের প্রায় তিন ঘণ্টা রানওয়েতে রাখা হয়। এরপর ভোর ২টার দিকে তাদের হাতকড়া ও শিকল খোলা হলে আগমনী টার্মিনালে নেয়া হয়। এই সময় কাউকে কাছে যেতে দেয়া হয়নি বা ছবি তুলতেও দেয়া হয়নি। ফেরত আসা ৩০ জনের মধ্যে একজন নারী ছিলেন।
একজন জ্যেষ্ঠ ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, এই প্রবাসীদের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার অধীনে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ সময় বিমানবন্দরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থা ও ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এনজিও সংস্থা ব্র্যাক জানিয়েছে, দেশে ফেরার পর তাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ এলাকায় পৌঁছানোর জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। তবে ব্র্যাকের অভিবাসন ও যুব কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান এই পদ্ধতিকে ‘অমানবিক’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভালো জীবনের আশায় মানুষ বিদেশে যায়, এবং কোনো দেশ চাইলে তাদের ফেরত পাঠাতে পারে; কিন্তু এভাবে হাতকড়া ও শিকল বেঁধে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখাটা খুবই অমানবিক, যা মানুষের মনে দীর্ঘস্থায়ী মানসিক আঘাত সৃষ্টি করে।’
যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই, তাদের ফেরত পাঠানো যায়। জানা গেছে, ফেরত আসা বেশিরভাগ ব্যক্তি মেক্সিকোসহ লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। তারা বাংলাদেশি দালাল চক্রের মাধ্যমে প্রত্যেকে প্রায় ৩০ থেকে ৮০ লাখ টাকা খরচ করেছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের পর থেকে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। এ বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৮০ জনের বেশি বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের ২ আগস্ট ৩৯ জন এবং মার্চ ও এপ্রিলে ৩৪ জনকে একইভাবে হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। এই ধরনের অমানবিক পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এবং অভিবাসীদের প্রতি আরও মানবিক আচরণের দাবি জোরালো হচ্ছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে