জলোচ্ছ্বাসে মৃত্যু দুজনের, বেড়িবাঁধের জন্য হাহাকার উপকূলে
বেড়িবাঁধ না থাকা বা ভাঙা অংশগুলো মেরামত না হওয়ায় বিপদ কাটছেই না প্রাকৃতিক দুর্যোগে বার বার ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলবাসীর। দুর্গতদের দাবি, কোনো অংশেই ভাঙা বেড়িবাঁধ না রেখে দ্রুত কাজ শেষ করলে বেঁচে যাবে তাদের জীবন এবং সহায় সম্পদ।
প্রতিদিন দুবেলা করে প্লাবিত হচ্ছে বেড়িবাঁধহীন এলাকাগুলো। ভেসে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম, ঘর-বাড়ি, কৃষিজমি ও ফসল। ত্রাণ সহায়তার চেয়েও বেশি হাহাকার তাই বেড়িবাঁধের জন্য
শুক্রবার (৩০ মে) নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত ও জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া এবং টেকনাফ উপজেলার ৫০টিরও বেশি উপকূলবর্তী গ্রাম।
জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে পড়ে মারা যান দুজন। পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানিতে দুদিন বন্দি ছিলেন আরও কয়েক হাজার মানুষ। পানির স্রোতের তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অসংখ্য কাঁচা, আধাপাকা সড়ক, ছোটখাটো কালভার্ট ও সেতু। নিমেষে বিলীন হয়ে যায় কয়েক হাজার একর বীজতলা ও ফসলের মাঠ, মাছের ঘেরও।
এখন সেই ধ্বংসস্তূপের ক্ষতচিহ্ন ভেসে উঠছে।
মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়নের সুতুরিয়া গ্রামের মোতালেব হোসেন বলেন, ‘প্রশাসন বা কেউই আগে থেকে কিছু জানাননি। কোনো দুর্যোগের আগাম সতর্ক সংকেত বা বার্তাও কেউ দেননি। বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করলে বুক সমান পানিতে ভেসে ছিলাম কয়েক ঘণ্টা। ছেলে নৌকা নিয়ে এসে উদ্ধার করে আমাকে। এরপর ঘরের সব জিনিসপত্র রেখে জান নিয়ে অন্য গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেই। দুদিন পরে ভাঙা ঘরে এসে মেরামতের চেষ্টা করছি’।
‘কেউ কোনো সাহায্য নিয়েও আসেননি’ বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আক্ষেপ করে ধলঘাটার সরইতলার জয়নাব বিবি বলেন, ‘একে তো গরিব, তার উপর মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসে এসব ঝড়-তুফান। ভাঙা বেড়িবাঁধ মেরামতও করেন না কেউ। এখানে কোনো সরকারও নেই, সরকারের মানুষও নেই আমাদের দেখার’।
প্রশাসন সূত্র জানায়, এবারের দুর্যোগে জেলায় ছয় হাজার ৪৮৪ পরিবার পানিবন্দি ছিলো। পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতটি পরিবার, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫১৭টি ঘর।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, কুতুবদিয়ায় ২১৬ মিটার পুরোপুরিসহ ১.০৪ কিলোমিটার, মহেশখালীতে ৯০৫ মিটার, চকরিয়ায় ১.৬ কিলোমিটার এবং সদর উপজেলার ভারুয়াখালীতে ২০০ মিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম জানান, আপদকালীন বরাদ্দ থেকে ২০ জুনের মধ্যেই এসব বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো মেরামত শেষ করার কাজ চলছে।
তাৎক্ষণিকভাবে দুই লাখ নগদ টাকা এবং ২৪ মেট্টিকটন চাল জেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে