গত দেড় বছরে বাংলাদেশে নতুন আরও আশ্রয় নিয়েছে দেড় লাখ রোহিঙ্গা: জাতিসংঘ
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে গত দেড় বছরে আরও ১ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। শুক্রবার (১১ জুলাই) জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিয়ানমারে চলমান সংঘাত বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযানের ফলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর দমন-পীড়নের সময় সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। চলমান সংকটে গত কয়েক মাসে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে।
ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে উদারভাবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে আসছে। বর্তমানে কক্সবাজারের মাত্র ২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। নতুন করে আসা দেড় লাখ রোহিঙ্গা এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে, ফলে এলাকাটি বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে পরিণত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন আগত শরণার্থীদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ২১ হাজারের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু এবং তারা জনাকীর্ণ শরণার্থী শিবিরগুলোতেই বসবাস করছে। এসব শরণার্থী মূলত মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল, যার ফলে দাতা সংস্থাগুলোর ওপর চাপ বেড়েছে।
তবে যারা এখনো নিবন্ধনের আওতায় আসেনি, তাদের কাছে প্রয়োজনীয় খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ও অন্যান্য মৌলিক সেবা পৌঁছে দেয়া স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য চরম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইউএনএইচসিআর আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, বৈশ্বিক সহায়তা তহবিলে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দ্রুত অতিরিক্ত তহবিল নিশ্চিত না হলে সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে, রান্নার জন্য ব্যবহৃত এলপিজি শেষ হয়ে যেতে পারে। এমনকি ডিসেম্বরের মধ্যে খাদ্য সহায়তাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর শিক্ষাসেবা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৬৩ হাজার শিশু নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া।
জাতিসংঘ ও মানবিক সহায়তাদানকারী সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে না আসা এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে