ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে: সেনা সদর দপ্তর
গুমের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় নাম উল্লেখিত ১৬ জন সেনা কর্মকর্তার মধ্যে ১৫ জনই সামরিক হেফাজতে রয়েছেন। তবে একজন কর্মকর্তা মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে সেনা সদর দপ্তর।
ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরতরা হলেন, মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, কর্নেল কে এম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন।
শনিবার (১১ অক্টোবর) ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, ট্রাইব্যুনালের মামলায় অভিযুক্ত সদস্যদের বিষয়ে আইন অনুসারে পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
তিনি জানান, ৫ থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত সেনাবাহিনীর পদোন্নতি বোর্ডের কার্যক্রম চলাকালে মেজর জেনারেল এবং তদুর্ধ পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একত্রিত করা হয়। বোর্ডের সিদ্ধান্তের পর সাধারণ সম্মেলন এবং ফর্মেশন কমান্ডারদের সম্মেলন হয়, যেখানে মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। ৮ অক্টোবর বিকেলে বোর্ডের সিদ্ধান্তের পর জানা যায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র দাখিল এবং একই দিনে ২৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল ২২ অক্টোবরের মধ্যে গ্রেপ্তার সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি জানান, প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, তিনটি মামলায় ২৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের নয়জন অবসরপ্রাপ্ত, একজন অবসর গ্রহণের জন্য ছুটিতে (এলপিআর) এবং অন্য ১৫ জন এখনও সক্রিয় চাকরিতে রয়েছেন। যদিও সেনাবাহিনী এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে পরোয়ানা গ্রহণ করেনি, তবুও সেনা সদর দপ্তর সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত সমস্ত আইনের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধার কথা পুনর্ব্যক্ত করছে।
অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল বলেন, ‘যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৫ জন বর্তমানে সেনা হেফাজতে রয়েছেন। আমরা মোট ১৬ জনকে সেনা হেফাজতে আসতে বলেছিলাম। তাদের ১৫ জনই এসে হেফাজতে রয়েছেন’।
মো. হাকিমুজ্জামান জানান, ‘৮ অক্টোবর চার্জশিট দাখিলের পর পরই এলপিআর ও সার্ভিসে থাকা ওই ১৬ জনকে সেনাসদরে সংযুক্ত করা হয়। তাদের ৯ অক্টোবরের মধ্যে সেনাসদরে আসার নির্দেশনা দেয়া হয়। মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ছাড়া বাকি ১৫ জন রেসপন্স করেছেন। তাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। তারা ফ্যামিলি থেকে ডিটাচ আছেন’।
তিনি বলেন, ‘মেজর জেনারেল কবির আত্মগোপনে গেছেন। তিনি যেন বিদেশে চলে যেতে না পারেন, সেজন্য তৎপরতা অব্যাহত রাখা হয়েছে’।
বুধবার (৮ অক্টোবর) মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই ৩০ জনের মধ্যে ২২ জনই কর্নেল থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তা।
আগামী ২১ অক্টোবরের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করে ২২ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।
প্রথম মামলায় র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে আটক ব্যক্তিদের নির্যাতনের অভিযোগে ১৭ জন এবং দ্বিতীয় মামলায় জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) নির্যাতনের ঘটনায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
দুই মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে, যিনি গত বছরের জুলাইয়ের গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হন। মামলায় আরও আসামি করা হয়েছে তার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকী এবং ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালককে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে