Views Bangladesh Logo

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ১১ দেশের

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত ও জটিল হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে পশ্চিমা বিশ্বের ১১ দেশ। তারা জানিয়েছে, মিয়ানমারের পরিস্থিতি ও বাংলাদেশে চলমান মানবিক সংকটের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে যৌথভাবে কাজ চালিয়ে যাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

বিশেষ করে আগামী মাসে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক মহল ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের আট বছরপূর্তিতে এই অঙ্গীকার জানাল দেশগুলো। যৌথ বিবৃতিতে অংশ নেয়া দেশগুলো হলো— অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, যুক্তরাজ্য, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও ফিনল্যান্ড।

সোমবার (২৫ আগস্ট) সকালে ঢাকায় অবস্থিত ফ্রান্স দূতাবাস তাদের এক্স হ্যান্ডেল এবং ফেসবুক পেজে যৌথ বিবৃতিটি প্রকাশ করে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আট বছর পেরিয়ে আমরা স্মরণ করছি মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সেই কর্মকাণ্ড, যার ফলে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা এখানে অবস্থান করছে এবং এখনো নতুন করে মানুষ আশ্রয়শিবিরে প্রবেশ করছে।

রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিনের সহনশীলতার প্রশংসা জানিয়ে বলা হয়, কঠিন বাস্তবতা ও বাস্তুচ্যুতি সত্ত্বেও তারা দৃঢ়ভাবে টিকে আছেন। রাখাইন রাজ্যের বর্তমান অবনতিশীল নিরাপত্তা ও মানবিক পরিস্থিতিতেও রোহিঙ্গারা ধৈর্য ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের মানবিক ভূমিকার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, নিরাপত্তা এবং জীবনরক্ষাকারী সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে—এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রসঙ্গে বলা হয়, তারা তাদের নিজ ভূমিতে ফিরতে চায়, তবে মিয়ানমারে এখনো এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যেখানে তারা স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, সম্মানের সঙ্গে ও স্থায়ীভাবে ফিরে যেতে পারে। বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়, বাস্তুচ্যুতির মূল কারণগুলোর সমাধান ছাড়া প্রত্যাবাসন সম্ভব নয় এবং এর জন্য প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল মিয়ানমার।

১১ দেশ স্পষ্ট করে জানায়, এখনই প্রত্যাবাসনের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তবে সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে সব পক্ষকে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়ে তারা সহিংসতা বন্ধ, মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং অন্যায়ভাবে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি জানায়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করে দেশগুলো।

এছাড়া, রোহিঙ্গাদের আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতির জন্য আরও স্থায়ী সমাধানের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। একইসঙ্গে, কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়।

বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়, যাতে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাবান হতে পারে এবং বাংলাদেশে অবস্থানকালে নিরাপদ, সম্মানজনক ও গঠনমূলক জীবনযাপন করতে পারে।

শেষাংশে দেশগুলো পুনর্ব্যক্ত করে—আট বছর পরও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও বাংলাদেশের পাশে অটলভাবে রয়েছে এবং এই সংকটের মূল কারণ নিরসনে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ