কিংবদন্তি শিল্পী এস এম সুলতানের জন্ম শতবার্ষিকীর বর্ণাঢ্য আয়োজন শুরু
কিংবদন্তি বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের জন্ম শতবার্ষিকীতে চলছে দুই বছরের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। তার ১০১তম জন্মবার্ষিকীর প্রাক্কালে ‘আমরা পরাজিত হলে এস এম সুলতানের স্বপ্ন আড়ালেই থেকে যাবে’ শীর্ষক এই আয়োজন শুরু হয়েছে রাজধানীর ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে।
বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে থাকছে সুলতানের শিল্পকর্ম ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, সেমিনার, কর্মশালা, স্মারক বক্তৃতা এবং শিল্পীর জীবন ও দর্শন বিষয়ে বই প্রকাশ।
রোববার (১০ আগস্ট) উদযাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই শিল্পীর ১০২তম জন্মদিন। ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণকারী সুলতান গ্রামীণ ভূদৃশ্য ও পেশীবহুল কৃষকদের চিত্রায়ন এবং ঐতিহ্যকে উপেক্ষা করে তার অনন্য শৈল্পিক শৈলীর জন্য খ্যাতিমান।
তার জীবন ও কর্মের প্রতি সম্মান জানিয়ে জন্মস্থান নড়াইলেও বর্ণাঢ্য আয়োজন করেছে এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন, জেলা প্রশাসন ও শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।
এস এম সুলতান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির শনিবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যার সূচনা আয়োজনে জানানো হয়েছে, গত বছর জন্ম শতবার্ষিকীর কর্মসূচি ঘোষিত হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতায় আয়োজনে বিলম্বিত হয়েছে।
‘শিল্পী সুলতানের উত্তরাধিকার: কল্পনা, সৌন্দর্য এবং সাধারণ মানুষের উত্থানের রাজনীতি’ শীর্ষক উদ্বোধনী আলোচনা সভায় কমিটির সদস্য সচিব একুশে পদকপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন সম্পাদিত ‘সুলতান খনন’ বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। প্রদর্শিত হয় মামুনের তৈরি তথ্যচিত্র, যেখানে শিল্পী সুলতানের প্রতি খ্যাতিমান শিল্পী, লেখক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের শ্রদ্ধাঞ্জলি তুলে ধরা হয়।
মূল বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শাহমান মৈশান বলেন, সুলতান এমন একজন শিল্পী, যিনি ঔপনিবেশিক সাংস্কৃতিক কাঠামো ও আধুনিকতাবাদী রীতিনীতি প্রত্যাখ্যান এবং মানবতার মূলে নিহিত দৃশ্যমান ভাষার বিকাশ করেছিলেন’।
ঐতিহ্যবাহী পটভূমি বা ছায়া ছাড়াই সুলতানের শক্তিশালী মানব ব্যক্তিত্বের স্বতন্ত্র চিত্র তুলে ধরেন কমিটির আহ্বায়ক শিল্পী মনিরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, ‘সুলতান গ্রামীণ জনগণের অপার শক্তিকে ধারণ এবং বাঙালির প্রাণবন্ত জীবনকে রঙ ও রেখায় উপস্থাপন করেছিলেন’।
বক্তব্য দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের, শিল্প সমালোচক অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, অধ্যাপক আবুল মনসুর ও মুস্তফা জামান।
এস এম সুলতান তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে পাবলো পিকাসো ও সালভাদর দালির সাথে চিত্র প্রদর্শনী করেছিলেন। তার একক প্রদর্শনী হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও পাকিস্তানেও। তিনি নড়াইল এবং যশোরে শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং একুশে পদক (১৯৮২), বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ পুরস্কার (১৯৮৬) ও স্বাধীনতা পুরস্কারে (১৯৯৩) ভূষিত হন।
১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর মারা যান এস এম সুলতান। তিনি এমন একটি উত্তরাধিকার রেখে গেছেন, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করে আসছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে